এক পিস জিলাপির দাম ৩৬০ টাকা
মাত্র ১ পিস জিলাপির দাম ৩৬০। জিলাপিটি পাওয়া যাচ্ছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতার বাজারে। ১ পিস হলেও একজনের পক্ষে এ জিলাপি খেয়ে শেষ করা সম্ভব নয়। বিক্রেতারা এর নাম দিয়েছেন শাহী জিলাপি।
দীর্ঘ ২ বছর পর আবার সেই চিরচেনা রূপে ফিরেছে পুরান ঢাকার ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতার বাজার। অন্যান্য খাবারের মতো এবার চকবাজারের ইফতার বাজারে নজর কেড়েছে হরেক রকমের বড় বড় জিলাপি।প্রতি পিস শাহী জিলাপির ওজন ১ কেজি ২০০ গ্রাম। প্রতি কেজি জিলাপির দাম ৩০০ টাকা।
বিজ্ঞাপন
১৯৯৫ সাল থেকে চকবাজারে শাহী জিলাপি বিক্রি করছেন লাল মিয়া। মাঝে দুই বছর বাদ দিলে অভিজ্ঞতা প্রায় ২৫ বছরের। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে প্রতিবারের মতো তিনি এবারও তৈরি করেছেন ১ থেকে দেড় কেজি ওজনের জিলাপি। প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে তিনি এক পিস জিলাপি বিক্রি করছেন ৩৪০ থেকে ৪০০ টাকায়।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোট জিলাপির পাশাপাশি গতকাল (প্রথম রমজান) ২৫টা শাহী জিলাপি বিক্রি হয়েছে। যানজটের কারণে অনেকেই গতকাল চকবাজার আসেনি। আশা করছি আজ এর চেয়েও বেশি বিক্রি হবে। মূলত যারা একটু সৌখিন তারা এই জিলাপি কেনেন। অনেকে মেয়ের বাড়িতে এই জিলাপি পাঠায়। কেউ ইফতারের দাওয়াতে গেলে নিয়ে যায়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও তেমন সুস্বাদু। অনেকেই চোখের লোভ সামলাতে না পেরে জিলাপিটি নিয়ে যান। বাসায় গিয়ে ভাগ করে খান। একটি জিলাপি সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ জন খেতে পারবেন। অন্যান্য জিলাপি থেকে এতে মিষ্টিও একটু কম দেওয়া হয়। কেউ চাইলে সর্বোচ্চ ৩ কেজি ওজনের জিলাপি বানিয়ে দিতে পারব।
শাহী জিলাপিতে ব্যবহৃত উপকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তৈরিতে বেসন, ঘি, ডালডা, ময়দা, মাষকলাইয়ের ডাল, বেকিং পাউডার, তেল, গোলাপজল, দারুচিনি ও এলাচ ব্যবহৃত হয়। সাধারণ জিলাপির মতো উপকরণ দিয়েও এটি তৈরি করা যায়। তবে যেহেতু এটার আকার বড় তাই সবগুলো উপকরণ ব্যবহার না করলে অনেকসময় জিলাপি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চকবাজারের শাহী জিলাপি বিক্রির এমন প্রায় ১০টি দোকান রয়েছে। শেখ সাকিল ইসলাম নামে আরেক বিক্রেতা বলেন, আমি আমার বাবার সঙ্গে ১৯৮৫ সাল থেকে এ ইফতার বাজারে আসি। বাবা মারা গেছেন। তার কাছ থেকেই শাহী জিলাপি তৈরি শেখে আমি এখন বিক্রি করি। আমরা চাই সারাদেশের লোকজন যেন চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে তৃপ্তি পায়। ব্যবসার চেয়েও আমাদের কাছে বড় হচ্ছে খাবারের মান ঠিক রাখা। এ কারণে ইফতারের ১০-১৫ মিনিট আগেই আমাদের সব খাবার শেষ হয়ে যায়। কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
শাহী জিলাপি ছাড়াও চকবাজারের ইফতারের বাজারে সাধারণ জিলাপি, ঘিয়ে ভাজা জিলাপি, চিকন জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি জিলাপি, প্যাঁচ জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ জিলাপির দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি, আর ঘিয়ে ভাজা জিলাপি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি।
ভ্রাম্যমাণ দোকান ছাড়াও চকবাজারে আনন্দ-বোম্বের মতো পরিচিত ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতেও জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। আনন্দ কনফেকশনারিতে প্রতি কেজি শাহী জিলাপি ১৬০, ঘিয়ে ভাজা ৩০০ এবং রেশমি ৫০০ টাকায় বিক্রি করছে। রেশমি জিলাপিতে ঘি, ডালডার পাশাপাশি জাফরান থাকে।
গুলশান-২ থেকে চকবাজারে ইফতার কিনতে এসেছেন কামরুল হাসান দুর্জয়। মোটরসাইকেলে তীব্র যানজট ঠেলে আড়াই ঘণ্টায় চকবাজারে আসা দুর্জয় বলেন, আমি প্রতিবছরই চকবাজার থেকে ইফতার কিনি। গতকাল টিভিতে দেখলাম অনেক জ্যাম। তাই বের হইনি। আজ আর লোভ সামলাতে না পেরে চলে আসলাম। এখানকার খাবারগুলো দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, স্বাদেও ভালো। তবে এখানে অধিকাংশ খাবারই খোলা আকাশের নিচে বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীরা যদি একটু স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করতেন তাহলে অনেক ভালো হতো।
এআর/এসকেডি