টিপ নিয়ে হেনস্তা : যথাযথ প্রক্রিয়ায় জিডির তদন্ত
টিপ পরা নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় এক শিক্ষিকাকে হেনস্তার ঘটনায় অভিযুক্ত কনস্টেবলকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তার নাম নাজমুল তারেক। পুলিশ লাইন থেকে সংযুক্ত হয়ে তিনি ভিআইপি, ভিভিআইপিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতেন।
এ বিষয়ে সোমবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজ কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। অভিযোগকারী ভদ্র মহিলার সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে মর্মে শিকার করেছে। সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগকারী নারী যে অভিযোগ তুলেছেন আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় তা তদন্ত করব।
বিজ্ঞাপন
ডিসি বিপ্লব বলেন, অভিযোগে ওই নারী কিন্তু পুলিশ সদস্যের নাম ও পদবি বলেননি। শুধু একজন পুলিশ সদস্যের কথা বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে তদন্ত শুরু করি। শুরু থেকে ডিএমপি কমিশনার, আইজিপি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ঘটনার যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করতে নির্দেশ দেন। পুরো তেজগাঁওয়ে কর্মরত সকল সদস্য নিয়ে আমরা একযোগে তদন্তে নামি। সকলের নিরলস প্রচেষ্টায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে সনাক্ত করতে সক্ষম হই।
অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের নাম নাজমুল তারেক। তিনি কনস্টেবল। ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগে কর্মরত। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ও এনালগ সব পর্যায়ে তদন্তপূর্বক কনস্টেবল নাজমুলের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। তার মোটরসাইকেল নম্বর ধরেও নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
অভিযুক্তকে সনাক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ পদক্ষেপ কী- জানতে চাইলে উপ-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সব জায়গায় ঘটনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সংসদেও আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনা হোক বা না হোক, আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করি। এইক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগকারী শিক্ষিকা ঘটনার বিবরণ উল্লেখ করে শেরে বাংলানগর থানায় একটি জিডি করেছেন। সেই জিডির যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তদন্ত করা হবে।
অভিযুক্ত কনস্টেবল নাজমুল তারেককে সনাক্ত করেছেন, জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন। তিনি ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে কী জানিয়েছেন? এমন প্রশ্নোত্তরে ডিসি বিপ্লব বলেন, আমরা অভিযুক্ত কনস্টেবল নাজমুল তারেকের সঙ্গে কথা বলেছি৷ অভিযোগকারী নারীর সঙ্গে একটি ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
টিপ পরা, ইভটিজিং সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে কিছু জানা গেছে কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা ঘটেছে, সেটার সত্যতা আমরা পেয়েছি। এখন টিপ পরা বা ইভটিজিং সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জিডির তদন্ত করবো। আমাদের প্রাথমিক কাজ ছিল অভিযুক্তকে সনাক্ত করা। যেহেতু জিডিতে অভিযুক্তের নাম, পদবী, ও মোটরসাইকেলের নম্বর পরিপূর্ণ ছিল না, শুধু সংক্ষিপ্ত বিবরণী ছিল। তবে আমরা চেষ্টা করে পরিচয় নিশ্চিত করেছি৷
গেল ২ এপ্রিল শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। থানায় দেওয়া অভিযোগে লতা সমাদ্দার লিখেছেন, শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে রিকশায় ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমার সামনে নামেন। সেখান থেকে হেঁটে তেজগাঁও কলেজে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন।
তখন সেজান পয়েন্টের সামনে থেমে থাকা একটি মোটরসাইকেলের ওপর পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি বসে ছিলেন। ওই মোটরসাইকেলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে ওই ব্যক্তি লতার কপালে টিপ পরা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন।
এক পর্যায়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন পুলিশের পোশাক পরা ওই ব্যক্তি। পেছনে ফিরে ঘটনার প্রতিবাদ করায় ফের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হ লতাকে। তাকে উদ্দেশ্য করে ‘টিপ পরছোস কেন’ মন্তব্য করেন ওই ব্যক্তি।
লতার অভিযোগ, তিনি প্রতিবাদ করায় পুলিশের ওই সদস্য মোটরসাইকেল চালিয়ে তার গায়ের ওপর উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। সরে গিয়ে রক্ষা পেলেও আহত হন তিনি। পরে পাশেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে তিনি বিস্তারিত জানান।
জেইউ/এনএফ