রোজার প্রথম দিনের শেষ বেলায় রাজধানীর বিভিন্ন বাজার, অলিগলি, অভিজাত হোটেল-রেস্তোরাঁয় জমে উঠেছে ইফতার বাজার। গত দুই বছর করোনার কারণে সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় ভ্রাম্যমাণ দোকান খুব একটা বসেনি। এ বছর সে সীমাবদ্ধতা না থাকায় সব জায়গায় ইফতারির বেচা-কেনা ঘিরে তৈরি হয়েছে অন্যরকম আমেজ।

রোববার (৩ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, আজিমপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নিয়মিত হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি বসেছে অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ দোকানও। সেসব দোকানে ছোলা, বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, ডিম চপ, দই বড়া, ডাবলির ঘুঘনি, মিষ্টি, শাহী হালিম, গরু-মুরগি-খাসির হালিম, কাবাব, সবজি পাকোড়া, মাংসের চপের পাশাপাশি অনেকে তাদের নিজস্ব বিশেষ আয়োজন নিয়ে বসেছেন। যার মধ্যে রয়েছে কবুতর ও কোয়েলের রোস্ট, রেশমি জিলাপি, বোম্বে জিলাপি, রেশমি কাবাব, গ্রিল চিকেন, বুন্দিয়া, গরুর কালো ভুনা, কাচ্চি, মগজ ভুনা, চিংড়ি বল, পরোটা, লুচি, চিকেন তান্দুরি, চিকেন বটি কবাব, দই চিড়া। রয়েছে পেস্তা বাদাম শরবত, বেলের শরবত, তরমুজের শরবতসহ অসংখ্য পানীয়র আয়োজন।

দোকানদাররা জানান, ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার কথা চিন্তা করে সর্বনিম্ন পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা মূল্যের ইফতারি পণ্য রাখা হয়েছে।

এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হতে দেখা যায় কলা, বাঙ্গি, তরমুজ, আনারস, আপেল, আঙ্গুর, লেবু, শশা, ধনিয়াপাতা, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর। ইফতারে খেজুর ও ফলের চাহিদা বেশি থাকায় এসব দোকানে বেশি ভিড় দেখা যায়।

নীলক্ষেত নিউমার্কেট এলাকার সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন দেখা যায় কাঁচাবাজারের প্রবেশপথের খোলা জায়গায়। আশপাশের হোটেল-রেস্তোরাঁর পাশাপাশি এই খোলা জায়গায় বসেছে প্রায় বিশটির মতো অস্থায়ী দোকান। বড় ড্রামে কেউ নিয়ে বসেছেন বড় বড় বরফ। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ভেঙে ভেঙে ১০, ২০ ও ৩০ টাকায় বরফখণ্ড বিক্রি করা হচ্ছে। নিউমার্কেট-নীলক্ষেতসহ আশপাশের বড় বড় মার্কেটগুলোর দোকানদাররাই এসব ইফতারের মূলক্রেতা।

কথা হয় অস্থায়ী দোকানি সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর সরকারি বিধিনিষেধের কারণে এখানে কোনো অস্থায়ী দোকান বসেনি। হোটেলগুলোতে সীমিত পরিসরে ইফতারি বিক্রি হয়েছে। এবার আমরা বসার সুযোগ পেয়েছি। প্রথম দিনে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।

আব্দুস সোবহান নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, সম্প্রতি তেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে ইফতারের দামেও। বেশি দামের ইফতার চলছে খুব কম। আলুর চপ, ছোলা বুট, মুড়ি, পেঁয়াজু, বুন্দিয়ার চাহিদাই বেশি। কাঁচামালের দাম বাড়ায় রেশমি জিলাপির দামও গতবারের তুলনায় বাড়াতে হয়েছে।

রোজার প্রথম দিনে ফলের প্রতিও মানুষের আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। তরমুজ, মালটা, কলা, আপেলের চাহিদা ছিল বেশি। আপেল, মালটার দাম অন্যান্য সময়ের মতো থাকলেও তরমুজ এবং কলার দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। ছোট আকৃতির তরমুজ কিনতে লাগছে দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা। বড় আকৃতির তরমুজের দাম হাঁকা হচ্ছে পাঁচশ-ছয়শ টাকা।

নিউমার্কেটের মেসার্স মা ফল বিতানের বিক্রেতা আজিজুল হক বলেন, সারাদিন রোদ থাকায় তরমুজ, বাঙ্গির বিক্রি ভালো হচ্ছে। তবে তরমুজের দাম কিছুটা বেশি। কারণ মাত্রই তরমুজের সিজন শুরু হয়েছে। ফলে তার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। তবে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর দামও কমে আসবে। তাছাড়া অন্যান্য ফলের দাম আগের মতোই স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানান তিনি।

আরএইচটি/জেডএস