বাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর
স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, আজকে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে একটি প্রিজনভ্যানে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে ২২ মার্চ তাকে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম কারাগারে আনা হয়েছিল। ওইদিন মামলার ধার্য তারিখে তাকে আদালতে তোলা হয়। মঙ্গলবার (২২ মার্চ) আদালতের নির্দেশে বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তার হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহের আদেশ দিয়েছিলেন।
সেদিনই বিচারকের খাস কামরায় বাবুল আক্তারের হাতের লেখার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
২২ মার্চ বাবুল আক্তারের আইনজীবীরা নিরাপত্তার কারণে তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে না রেখে পুনরায় ফেনীতে পাঠানোর আবেদন করেছিল। আদালত আদেশে, কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন।
গত বছরের মে মাসে মাহমুদার বাবা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলার এজাহারে এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বাবুল তার স্ত্রী মাহমুদাকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
যদিও ২৫ জানুয়ারি মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে পিবিআই। পিবিআই জানায়, একই ঘটনায় বাবুল আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত এগিয়ে নিতে মিতুর বাবা মোশাররফের মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। একই ঘটনায় দুটি মামলা চলতে পারে না। সম্প্রতি আদালত এটিকে ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন। তাই আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে ও বিধিবিধান অনুসারে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুলের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলবে।
এর মধ্যে বাবুল আক্তারের করা মামলাটির অধিকতর তদন্ত চলছে। অধিকতর তদন্ত চলাকালে আদালতের আদেশে ৯ জানুয়ারি বাবুল আক্তারকে নিজের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মিতু হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তার যে মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেটির তদন্ত শেষ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল পিবিআই। কিন্তু আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন না নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। মিতুর বাবার করা মামলাটিও তদন্ত করছে পিবিআই।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম (মিতু)। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। এরপর থেকে কারাগারে আছেন বাবুল আক্তার।
কেএম/এসএম