চট্টগ্রামে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এর উদ্বোধন করেন। জেলার দামপাড়ায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে প্রায় ছয় হাজার বর্গফুট আয়তনজুড়ে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অবস্থান।

জাদুঘরটির সংগ্রহে রয়েছে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে গঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যদের ছবি, ব্যবহৃত অস্ত্র, পোশাক ও বিভিন্ন জিনিসপত্র। এছাড়া জাদুঘরের একটি অংশজুড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। সেখানে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের চট্টগ্রামের অংশটির পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্মারক, ডকুমেন্ট স্থান পেয়েছে। 

এছাড়াও জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে তৎকালীন পুলিশ সদস্যদের ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ও পোশাক, শহীদ পুলিশ সুপার এম শামসুল হকের স্মারক হিসেবে ব্যবহৃত র‍্যাংক ব্যাজসহ টিউনিক সেট, স্টিক, ক্যামেরা, কলম, বেল্ট, ক্যাপ।  

আরও রয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আরআই আকরাম হোসেনের স্মারক হিসেবে তার ব্যবহৃত রেডিও। মাস্টারদা সূর্যসেন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত নানা ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে জাদুঘরটিতে। 

জাদুঘর উদ্বোধনকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ জাদুঘর পরিদর্শন করে নতুন প্রজন্ম উপকৃত হবে। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রামবাসী কোনোদিন মাথা নত করেনি। সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছে। তারই স্বাক্ষর হলো এ জাদুঘর।  
 
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের  কমিশনার  সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, মাস্টারদা সূর্য সেনের ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহ ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম পুলিশের আত্মত্যাগ মূলত চট্টগ্রামের ইতিহাস। এর বিশেষ লক্ষ্য এ অঞ্চলে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করে তোলা।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদাৎ হুসেন রাসেল বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে চট্টগ্রামের ৮১ জন পুলিশ সদস্যের শাহাদাৎ বরণ করেন। ঐতিহাসিক নানা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাকে তুলে ধরতে মৌলিক ব্রিটিশ স্থাপত্যশৈলীতে প্রতিষ্ঠিত লাল ভবন দুটির অখণ্ডতা বজায় রেখে আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, শিল্প ও স্থাপত্যের ক্রিয়ামূলকতা ও মিনিমালিজম আরোপণের মাধ্যমে পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। 

উদ্বোধন শেষে আমন্ত্রিত অতিথিরা জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন সময়ের পুলিশের পোশাক, তৎকালীন সরকারি দপ্তরের চিঠি, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, বীরশ্রেষ্ঠদের বৃত্তান্ত, বর্তমান পুলিশ সদস্যদের পোশাক, দামপাড়া পুলিশ লাইন্সের ম্যাপ, ফাঁসির মঞ্চ, ভিজ্যুয়াল ডিসপ্লে সমেত হল রুম, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের ছবি, বঙ্গবন্ধু কর্নার, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বিভিন্ন বই, বঙ্গবন্ধুর ছবি ও তার লেখা বই,  মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র ইত্যাদি পরিদর্শন করেন।

আগামী ২৬ মার্চ দর্শনার্থীদের জন্য জাদুঘরটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীন, বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রাম মো. আশরাফ উদ্দিন,  চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) মো. শামসুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) সানা শামিনুর রহমানসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কেএম/আরএইচ