দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ আসামি হলেন কাস্টম কর্মকর্তা
এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রাখার অভিযোগে এক কাস্টমস কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলায় পানগাঁও শুল্ক ও গোয়েন্দা সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল মান্নান মজুমদার এবং তার স্ত্রী তাসনুভা চৌধুরীরকে আসামি করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৩ মার্চ) বিকেলে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন। ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।
দুদক সূত্রে জানা যায়, আসামিরা দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকরা সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন ও এক কোটি ৬১ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে ভোগ-দখল করছেন। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২), ও ৪(৩) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
সূত্রে আর জানা যায়, তাসনুভা চৌধুরীর দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকরা সম্পদ বিবরণী যাচাই করে দুদক। যাচাইয়ে জানতে পারে, তার সঙ্গে ২০১০ সালে মান্নান মজুমদারের বিয়ে হয়। আব্দুল মজুমদার আগে চট্টগ্রাম কাস্টমসে এপ্রেইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে রাজস্ব কর্মরত গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল, পানগাঁও। সম্পদ বিবরণীতে তাসনুভা চৌধুরী ৭৬ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৩ টাকার সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু সম্পদ বিবরণী অনুসন্ধানকালে তাসনুভা চৌধুরীর ১ কোটি ৪৭ লাখ ২ হাজার ৫০০ টাকার স্থাবর সম্পদ, ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ৭১৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ২ কোটি ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ২১৮ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি সম্পদ বিবরণীতে এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। এছাড়া এক কোটি ৬১ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৮ টাকার আয়ের উৎস কম পাওয়া যায়।
দুদক অনুসন্ধানে জানতে পারে, তাসনুভা চৌধুরী চার বছরে মৎস্য খামার থেকে সর্বমোট ৮৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৪ টাকা আয় করেছেন। কিন্তু সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, রামগতি, লক্ষ্মীপুর কর্তৃক পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী তাসনুভা চৌধুরীর নামে মৎস্য বিভাগ থেকে মাছ চাষ করার জন্য কোনো নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। রামগতি উপজেলায় মৎস্য চাষের যে অনুশীলন এবং বাংলাদেশে গড়ে হেক্টর প্রতি মাছের যে সর্বোচ্চ উৎপাদন সে অনুযায়ী ৪ বছরে ৪.২১ একর আয়তনের জলাশয়ে মাছ চাষ করা হলে আনুমানিক সর্বোচ্চ উৎপাদিত মাছের পাইকারি বিক্রিমূল্য ৪০ লাখ ৭০ হাজার টাকা হতে পারে। তাসনুভা চৌধুরী মাছের খামার থেকে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪ টাকা অতিরিক্ত আয় দেখিয়েছেন বলে তদন্তে উঠে আসে।
অপরদিকে, দাখিলকরা সম্পদ বিবরণীতে তিনি এক কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
তাসনুভা চৌধুরী মাছের খামার থেকে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৪ টাকা অতিরিক্ত প্রদর্শিত আয় ও দাখিলকরা সম্পদ বিবরণীতে গোপনকরা ১ কোটি ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৪৫ টাকা মূলত আসামি আবদুল মান্নান ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বলে প্রতীয়মান হয়েছে দুদকের কাছে। স্বামীর ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন করার উদ্দেশ্যে আসামি তাসনুভা চৌধুরী তার আয়কর নথিতে মাছ খামার থেকে আয় হিসেবে ওই টাকা প্রদর্শন এবং দাখিলকরা সম্পদ বিবরণীতে তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রাখার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর ৪(২), ও ৪(৩) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলাটি করা হয়েছে।
কেএম/এসএম