পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন। 

জানা গেছে, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। বেলা ১১টায় কোল জেটিতে ২০০ নৌকা থেকে পতাকা নাড়িয়ে ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে তাকে অভিবাদন জানানো হবে। এরপর 
বেলা সাড়ে ১১টায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। 

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট কর্পোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দেশের সর্ববৃহৎ ও দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্বের ১১তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে।

এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অর্ধেক মালিকানা বাংলাদেশের, বাকি অর্ধেক মালিকানা চায়না পাওয়ার কোম্পানির (বিসিপিসিএল)। 

২০২০ সালের ১৫ মে প্রথমে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে এই কেন্দ্র থেকে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়। পরে একই বছরের ৮ ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

আজ (রোববার) বিসিপিসিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। পরিবেশকে সুরক্ষা করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে পরিবেশের বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিবেশের কথা চিন্তা করে ৫ থেকে ৭ ভাগ অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে, যাতে আশপাশের মানুষ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এ এম খোরশেদুল আলম আরও বলেন, একটা দেশের শতভাগ পরিবার বিদ্যুতের আওতায় আসছে, তা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। 

প্রকল্পের ২য় অংশে আরও ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান এ এম খোরশেদুল আলম। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি আমরা এটি চালু করতে পারব। ইতোমধ্যে ২২ ভাগ অগ্রগতি হয়েছে।

 

এ সময় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বাংলাদেশে এত বড় এবং সর্বাধুনিক প্রকল্প গত ৫০ বছরের মধ্যে আর হয়নি। তবে এটি নির্মাণ করা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, বিভিন্ন দিক থেকে বাধা এসেছিল। বলা হয়েছিল, দেশের মানুষ মারা যাবে, অঞ্চল ধূলিসাৎ হয়ে যাবে, এখানে মরুভূমি হয়ে যাবে। 

তিনি বলেন, প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ হয়েছে এবং প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার আমরা সাশ্রয় করতে পেরেছি। তাই প্রকল্পটি অনেক দিক দিয়েই ইউনিক। 

তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে, প্রতিটি ঘর আলোকিত হয়েছে। আগামীকাল (সোমবার) শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দেবেন প্রধানমন্ত্রী। মুজিববর্ষে শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা বাস্তবায়নও করেছেন তিনি। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করে এ সময় বলেন, দেশের প্রতিটি ঘরে-ঘরে আলোকিত করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে অনুযায়ী ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টি আমাদের জন্য গর্বের ব্যাপার। 

এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পটুয়াখালীতে মানুষের মধ্যে খুশির জোয়ার বইছে। জেলার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এছাড়া সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন।

এসএইচআর/এইচকে