চারদিকে তখন আগুন, জীবন বাঁচাতে তখন সবার দিগ্বিদিক ছোটাছুটি। চায়না বেগম তখনও ঘরেই ছিলেন। হঠাৎ তার স্বামী জামিরুল ইসলাম এসে বললেন, দ্রুত বের হও, চারদিকে আগুন।

কিছুই ছুঁয়ে দেখতে পারেননি চায়না বেগম, শুধু কোলের সন্তান মিমকে কোনো মতে নিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। স্বামীকে বলছিলেন ঘর থেকে কিছু বের করতে, কিন্তু স্বামী বললেন কিছু বের করার আর সময় নেই। আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ঘর থেকে কিছু বের না করেই নিরাপদ দূরত্বে এসে আশ্রয় নেন তারা।

রোববার (২০ মার্চ) রাতে রাজধানীর কল্যাণপুর নতুনবাজার বেলতলা বস্তির আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত চায়না বেগম এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

তিনি ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদককে বলেন, আমার স্বামী এসে বলছে আগুন লাগছে বের হও, বের হও। চারদিকে আগুন আর আগুন, তবুও স্বামীকে বললাম ঘর থেকে কিছু বের করো, স্বামী তখন বলল বের করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। তুমি বাচ্চা নিয়ে বের হয়ে নিরাপদ দূরত্বে যাও।

চায়না বেগম বলেন, আমি শ্যামলীতে বাসা-বাড়ির কাজ করি। আমার জামাই আগে বাবুর্চির কাজ করত, এখন বেকার। আগুন যখন লাগে তখন আমি ঘরেই ছিলাম। কিন্তু কিছু বের করতে পারিনি। শুধু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কোনো মতে নিজেরা বের হয়েছি। ঘরে টিভি, খাট, শোকেস সবই ছিল কিন্তু কিছুই বের করতে পারিনি। অনেকের ঘর পুড়ে গেছে কিন্তু কেউই কিছু বের করতে পারেনি।

চায়না বেগমের অন্য দুই মেয়েও ঘর থেকে বেরিয়ে জীবন বাঁচাতে পেরেছে। দেড় বছরের ছোট্ট মিমকে কোলে নিয়া জীবন বাঁচার তাগিদে বেরিয়ে পড়েন তিনিও। সাজানো সংসারের কিছুই সঙ্গে আর নিতে পারেননি।

এর আগে রোববার (২০ মার্চ) রাত ৯টায় ফায়ার সার্ভিস আগুনের খবর পায়। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিটের প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের চেষ্টায় রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন নেভাতে ফায়ার কর্মীদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় মানুষও।

বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাসেল ফারুক বলেন, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানা যায়নি। তবে আগুন খুবই ভয়াবহ ছিল। বস্তির দুই-তৃতীয়াংশ জ্বলেছে। বস্তির অধিবাসীরা আহাজারি করছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এএসএস/এসএসএইচ