অবশেষে শুরু হচ্ছে জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা- ২০২১’ প্রকল্পের আওতায় আগামী জুন থেকে মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। চলবে মাত্র আট দিন। এবার এ কাজে প্রথমবারের মতো ট্যাব ব্যবহার করা হবে। এজন্য ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব। কিন্তু কাজ শেষে ট্যাবগুলোর কী হবে— প্রশ্ন উঠেছে সে বিষয়ে।

জানা গেছে, মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনা ম্যানুয়াল বা আইসিআর পদ্ধতিতে করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সব জিনিসপত্রও কেনা হয়। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হওয়ার পর নতুন প্রকল্প পরিচালক এসে প্রকল্পটি ডিজিটালি করার উদ্যোগ নেন। ডিপিপি সংশোধন করে তাতে যুক্ত করা হয় ট্যাব। আগের কেনা জিনিসপত্র বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত হয় নতুন করে ট্যাব কেনার।

মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুযায়ী এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনা ম্যানুয়াল বা আইসিআর পদ্ধতিতে করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী সব জিনিসপত্রও কেনা হয়। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হওয়ার পর নতুন প্রকল্প পরিচালক এসে প্রকল্পটি ডিজিটালি করার উদ্যোগ নেন। ডিপিপি সংশোধন করে তাতে যুক্ত করা হয় ট্যাব। আগের কেনা জিনিসপত্র বাদ দিয়ে সিদ্ধান্ত হয় নতুন করে ট্যাব কেনার

কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ট্যাব কেনার প্রস্তাব পরপর তিনবার ফেরত দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চতুর্থবারে এসে গত ৩ মার্চ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বিবিএসের ট্যাব কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় ক্রয় কমিটি। 

তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে কেনা হচ্ছে / ফাইল ছবি

সভা শেষে তখন অর্থমন্ত্রী বলেন, তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট ‘ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ থেকে কেনা হবে। ট্যাবগুলো কিনতে মোট ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা ব্যয় হবে।

এত সংখ্যক ট্যাব ওয়ালটনের দেওয়ার সক্ষমতা আছে কি না— জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছু বিবিএসের এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওয়ালটনের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের সক্ষমতা আছে। তারা জানিয়েছে, ওয়ালটন প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একটি ট্যাব উৎপাদন করে। তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাব তারা মাত্র ১৫ দিনে ডেলিভারি দিতে পারবে। তবে ট্যাব ডেলিভারি দেওয়ার পরই তাদের সক্ষমতা ও কোয়ালিটি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

সভা শেষে তখন অর্থমন্ত্রী বলেন, তিন লাখ ৯৫ হাজার ট্যাবলেট ‘ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ থেকে কেনা হবে। ট্যাবগুলো কিনতে মোট ৪৪৭ কোটি ৭৭ লাখ ৭৭ হাজার ৬৭০ টাকা ব্যয় হবে

শুমারি শেষে ট্যাবগুলো দিয়ে কী করা হবে— জানতে চাইলে বিবিএস মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনশুমারির কাজ শেষ হলে ট্যাবগুলো সংরক্ষণ করা হবে। পরে অর্থনৈতিক শুমারি- ২০২২ এর কাজে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া সারাবছরই আমাদের নানা জরিপ ও সার্ভে অনুষ্ঠিত হয়। ট্যাবগুলো এসব জরিপ ও সার্ভের কাজে ব্যবহার করা হবে। বিবিএসের নানা কাজে সারাবছর প্রায় এক লাখ ট্যাব ব্যবহার হবে।

বিবিএসের কর্মকর্তারা জানান, ট্যাব কেনার টেন্ডারে দুটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। ‘ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড’ ও ‘ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। ওয়ালটন প্রতিবারই ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা কমে ক্রয় টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে। ই-জিপি টেন্ডারের নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে। তবে, প্রথম তিনবার ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের পক্ষে সুপারিশ ছিল বিবিএসের। তিনবারই প্রস্তাবটি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক থেকে ফেরত আসে। চতুর্থবারে ওয়ালটনের পক্ষে বিবিএস সুপারিশ করলে প্রস্তাবটি অনুমোদন দেয় ক্রয় কমিটি।

জনশুমারির কাজ শেষ হলে ট্যাবগুলো সংরক্ষণ করা হবে— বলছেন বিবিএস মহাপরিচালক / ফাইল ছবি

সূত্র জানায়, ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ট্যাব ক্রয়ের টেন্ডারে চার জিবি র‍্যাম ও ৬৪ জিবি রম সমৃদ্ধ ট্যাব দেওয়ার কথা বলেছে। অন্যদিকে, ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড দুই জিবি র‍্যাম এবং ৩০ জিবি রম সমৃদ্ধ ট্যাবের কথা উল্লেখ করে টেন্ডারে। কাগজে-কলমে ফেয়ার ইলেকট্রনিক্স লিমিটেডের চেয়ে ওয়ালটনের ট্যাব বেশি মানসম্পন্ন। পাশাপাশি প্রায় ১০০ কোটি টাকা কমে দরপত্র জমা দেয় ওয়ালটন। ফলে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেশীয় এ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয় ক্রয় কমিটি।

উল্লেখ্য, ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা- ২০২১’ শীর্ষক মূল প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর। অনুমোদিত প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। 

এসআর/এইচকে/