জিয়াউর রহমান /ফাইল ছবি

রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনিকেও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে খন্দকার মোশতাকের নামও কাটা হবে।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জামুকার ৭২তম সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আরো বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এরপর তা বাস্তবায়নের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করবে জামুকা। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামুকার সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে আত্মস্বীকৃত খুনিদের নাম মুক্তিযুদ্ধের মত পবিত্র জায়গায় থাকার কোনো অধিকার নেই। একইসঙ্গে যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল তাদের নামও এখানে থাকার কোনো সুযোগ নেই। তাই চার খুনিসহ জিয়াউর রহমানের নাম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে,  জামুকার বৈঠকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খানের নামে খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে খন্দকার মোশতাকের নাম মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাতিল করা হবে। এ ধরনের আরও ব্যক্তির নাম পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বাদ দেয়া হবে। 

এছাড়া এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বহালের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াহিদুর রহমান ও হাফিজুর রহমান মুন্সীর গেজেট ও সনদ বাতিল করেছিল মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, সরকারের খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট অনুসারে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘বীর উত্তম’, শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’, নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান ‘বীর প্রতীক’ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের তালিকায় ছিল খন্দকার মোশতাকের নাম। এদের মধ্যে শরিফুল হক ডালিম, নুর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন খান স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এসব খুনির মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করলেও রাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের মর্যাদা বাতিল করেনি। 

গত বছরের ১৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত জামুকার সভায় বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহ উদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করার সুপারিশ করলে ৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত জামুকার বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বীর মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা জামুকার একজন সদস্য বলেন, জামুকার সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নামের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের খেতাব থাকতে পারে না। তাই বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ব্যক্তিদের মুক্তিযুদ্ধে খেতাব বাতিল করা হবে। এটা নিয়ে আরো একাধিক বৈঠক হবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্ত্রণালয়কে তা বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে। 

এনএম/ওএফ