গ্রাম তখনই শহর হবে যখন নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে : আইজিপি
বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহর করে গড়ে তোলার। সরকারের এই প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ তখনই সফল হবে যখন গ্রামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) রাজধানীর রাজারবাগের পুলিশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ নির্মিত গ্রাফিক নভেল ‘দুর্জয়ের ডায়েরি’ এবং অ্যানিমেটেড ফিল্ম সিরিজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। যদিও এর মাঝে কিছু বছর গেছে গ্রহণকাল। সেই গ্রহণকাল শেষে আমরা যখন সত্যের আলোর দিশা পেয়েছি, তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর কার্যক্রম নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি আবারও শুরু হয়েছে। এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা প্রচুর তথ্য জানতে পেরেছি। পুলিশের পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়। পুলিশ যে গবেষণাটি করেছে সেটি একটি উন্নতমানের গবেষণা হয়েছে। এই গবেষণাটি খুব দ্রুত আমরা প্রকাশ করতে চাই।
পুলিশের গবেষণায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে থানা স্থাপন করার স্বপ্ন দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর স্পষ্ট ধারণা ছিল স্বাধীনতা পরবর্তী পুলিশ কলনিয়ান বা সেমি-কলনিয়ান পুলিশ হবে না। এই পুলিশ হবে জনবান্ধব। তিনি স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সব বিষয় স্পর্শ করেছেন। এমন এমন আইন ও পরিকল্পনা করেছেন যে সেগুলো এই মুহূর্তেও কারো মাথায় আসবে না।
আইজিপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন প্রতিটি গ্রামই হবে শহর। যে সুযোগের আশায় মানুষ শহরে আসে, সে সুযোগ-সুবিধা গ্রামেই তৈরি হবে। যার ফলে প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। শিক্ষা, চিকিৎসা সেবাসহ অবকাঠামোগত বিষয়গুলো যখন গ্রামে তৈরি করতে পারব, তখন মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবে। আগামী ২০৩০ সালের দিকে এই চিত্র দেখা যাবে।
যদি প্রতিটি গ্রাম শহর হয় তাহলে নিরাপত্তা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তা ছাড়া গ্রাম শহর হবে না। নিরাপত্তা অক্সিজেনের মতো, একটি মানবদেহ যেমন অক্সিজেন ছাড়া জীবিত থাকতে পারে না,তেমনি নিরাপত্তা ছাড়া একটি সমাজ চলতে পারে না। গ্রাম তখনই দ্রুত শহর হবে, যখন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। এজন্য সারাদেশে আমরা বিট পুলিশিং নিয়ে কাজ করছি। এর মাধ্যমে গ্রামে সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশি সেবাটা আমরা নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করছি।
আইজিপি বলেন, একটা সময় ছিল, যখন দিন কিংবা রাত বিপদে পড়লে দৌড়ে যেতে হতো থানায়। এখন বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে আমরা লোকাল এলাকায় পুলিশি সেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। আমরা প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে কক্ষ নিয়েছি সরকারের কাছে চিঠি লিখে। যখন আমাদের বিট অফিসার ইউনিয়নে যান তখন তিনি সেই কক্ষে বসতে পারেন। বিট অফিসাররা যখন সুযোগ পান তখন নির্ধারিত তারিখে থানা থেকে ইউনিয়নে যান। আমরা প্রথমবার দেখেছি যে, বিট পুলিশিংয়ের কারণে ২০-২৫ হাজার মামলা কমে গিয়েছিল।
বিট পুলিশিং সম্পর্কে পুলিশ ও নাগরিকদের ভালোভাবে জানতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিট পুলিশিং সেবার ক্ষেত্রে বিট পুলিশ ও নাগরিক উভয় পক্ষে আগে ভালো করে জানতে হবে, তারা কী সেবা নিতে এবং দিতে পারবেন। আর সেই কারণে আমরা গ্রাফিক নভেল ও অ্যানিমেটেড ফিল্ম সিরিজ উদ্বোধন করেছি। এসবের মাধ্যমে দ্রুত তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়। গ্রাফিক নভেলের মাধ্যমে আমরা নিরাপত্তাজনিত বার্তাগুলো মানুষকে দিতে চাই। আমরা চাই যারা সেবা নেবেন তাদের যেন স্পষ্ট ধারণা থাকে তিনি কী কী সেবা নিতে পারবেন, অন্যদিকে যিনি সেবা দেবেন তারও যেন স্পষ্ট ধারণা থাকা তার কাজের বিষয়ে।
সঠিক ধারণা থাকলে পুলিশি সেবা নিতে সমস্যা সৃষ্টি হয় না উল্লেখ করে পুলিশ প্রধান বলেন, অনেক সময় দেখা যায় সেবা কোথায় থেকে পেতে পারি সেই ধারণা না থাকার কারণে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এছাড়া অনেক অভিযোগও আসে। যেমন জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয় অর্থাৎ দেওয়ানি সংক্রান্ত বিষয় পুলিশের কাজের মধ্যে পড়ে না। আসলে আমরা এ বিষয়ে সেবাই দেই না। সঠিক তথ্য না থাকার কারণে দেওয়ানি সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন এবং সেবা না পেলে ধারণা করেন অন্য পার্টির কাছ থেকে পুলিশ টাকা খেয়েছে।
আইজিপি বলেন, করোনার কারণে মানুষের অর্থনৈতিক কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে। ফলে অপরাধীদেরও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার প্রভাব দেখা গেছে। তবে বিশ্বাস করি করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলা করে আমরা আগের জায়গায় ফিরে যাব।
অনুষ্ঠানে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এমএসি/জেডএস