গাড়ির বিমা করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। বিমার টাকা নিয়ে কোম্পানিতে জমা না দিয়ে এজেন্ট নিজেই আত্মসাৎ করেছেন। আবার গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিমা করেও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন সুমন।

ব্যারিস্টার সুমন ঢাকা পোস্টের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এজেন্ট নিমাইয়ের মাধ্যমে পূবালী ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি। এরপর নিয়ম অনুসারে ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্সের জন্য এজেন্ট নিমাইকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন দেখি এজেন্ট নিমাই ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকার বিমা করেছে। বাকি ৯৬ হাজার টাকা নিজেই আত্মসাৎ করেছে।

তিনি বলেন, এক বছর আগে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানিতে বিমা করেছি। গত ২২ জানুয়ারি দুর্ঘটনায় আমার গাড়ির কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্যারেজে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ভাউচার করতে। পরের দিন কোম্পানির পক্ষ থেকে একটি টিম গাড়ির ক্ষতির বিষয়টি দেখেন। তারা থানায় গিয়ে জিডি করতে বললে জিডিও করি।

সুমন বলেন, আমি ৭৩ হাজার টাকা ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে বিমা দাবির আবেদন করেছি। আবেদনের পর বিমা কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দিয়ে দিচ্ছি, কাজ চলছে ইত্যাদি। এর মধ্যে গত ৬ মার্চ (রোববার) কোম্পানি থেকে ফোন দিয়ে জানাল, আমার বিমার দাবি চেক হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হয়নি। এখনো বলছে হচ্ছে- একটু সময় লাগবে, এই-সেই।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, একজন আইনজীবী হয়ে দুই মাস ধরে পাওনা টাকার জন্য কোম্পানির এক অফিস থেকে আরেক অফিসে যাচ্ছি। কিন্তু কোম্পানি বিমার টাকা দিচ্ছে না। তাহলে সাধারণ মানুষকে কী পরিমাণ হয়রানি করা হচ্ছে।    

প্রতারণার বিষয়ে এজেন্ট নিমাইয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলা চেষ্টা করা হলেও প্রথমে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে ফোন ধরলে পরিচয় দিয়ে ঘটনার সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কেটে দেন। এরপর আর ফোন রিসিভ করেননি, বলেন সুমন।

এ বিষয়ে গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোশাররফ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গাড়ির ক্ষতিপূরণের চেক মঙ্গলবার হস্তান্তর করা হবে। কোম্পানির পক্ষ থেকে গত সপ্তাহে চেক রেডি বলা হয়েছে, এখন আবার সময়ক্ষেপণ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগে কোম্পানির অফিসার বলেছেন বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন আমি জানতে পারলাম। সঙ্গে সঙ্গে ক্লেইম দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

কত টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়টি এখনি বলতে চাচ্ছি না। তবে সুমনের সহকর্মী জানান, কোম্পানি ৪৫ হাজার টাকার চেক দিতে চাইছে।

এদিকে সোমবার (১৪মার্চ) দুপুরে এজেন্ট নিমাইয়ের প্রতারণা ও বিমা কোম্পানির হয়রানির বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লাইভে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের সাবেক এই কৌঁসুলি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সব ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো যেখানে দিন দিন বড় হচ্ছে, আমাদের দেশের বিমা কোম্পানিগুলো সেখানে খারাপ পারফরমেন্সের পসরা সাজিয়ে বসেছে। এগুলো নামসর্বস্ব কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে। এদের কার্যক্রম এতো খারাপ যে, এক সপ্তাহ আগে আমাকে কোম্পানি থেকে ফোন করে বলা হলো আমার ক্লেইম করা বিষয়টি রেডি, এলেই পেয়ে যাব। অথচ আট দিন পর এসেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি।

এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো সদুত্তর পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদের টেনডেন্সি হচ্ছে এমনভাবে গ্রাহককে জ্বালা-যন্ত্রণা দেবে, যেন আর কখনো কেউ কোনো ক্লেইম নিয়ে না আসেন। ইন্স্যুরেন্স মানে হচ্ছে একবার টাকা জমা হয়ে গেল তো, আর ফেরতের নাম নেই।

ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে কখনো কথা বলি না, কিন্তু এ বিষয়টি তুলে ধরা উচিত বলে মনে করেছি। কারণ বহু সাধারণ মানুষ আছেন যারা ইন্স্যুরেন্সের খপ্পরে পড়ে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

একজন আইনজীবীকে এভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হতে পারে সেটা বুঝতে আর বাকি থাকে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় ফারইস্ট ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগের বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।

গ্রাহকদের হয়রানি করা এসব ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানিগুলোর দিকে নজরদারি বৃদ্ধি ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমা কোম্পানির নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও সরকারের দাবি জানান ব্যারিস্টার সুমন।

এমআই/ওএফ