ছিল প্রবল ইচ্ছাশক্তি
তিনি আজ কর্মসংস্থান ব্যাংকের এমডি
শুরু থেকেই কাজের প্রতি একাগ্রতা ছিল। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার দৃঢ় সংকল্প ছিল। মানুষের সঙ্গে মেশার সহজাত প্রবণতা ছিল। যখনই কেউ কোনো কাজ নিয়ে এসেছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তার সমাধান দিতে। প্রবল ইচ্ছাশক্তির জোরে আজ তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের এমডি…
শিরীন আখতার, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। প্রথম কোনো নারী হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির সর্বোচ্চ পদে আসীন তিনি। এর আগে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রথম নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
১৯৮৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শিরীন আখতার। পরে তিনি ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক, বিভিন্ন বিভাগ ও সার্কেল মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। পদোন্নতি পেয়ে হন ব্যবস্থাপনা পরিচালকও। এভাবে সিনিয়র অফিসার থেকে ধাপে ধাপে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এখন তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
১৯৮৮ সালে অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন শিরীন আখতার। পরে তিনি ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক, বিভিন্ন বিভাগ ও সার্কেল মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে। পদোন্নতি পেয়ে হন ব্যবস্থাপনা পরিচালকও। এভাবে সিনিয়র অফিসার থেকে ধাপে ধাপে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে এখন তিনি কর্মসংস্থান ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন
সরকারি মালিকানাধীন একটি ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে আসীন হওয়া সফল এ নারীর চলার পথের নানা প্রতিবন্ধকতা এবং দুর্গম সেই পথ মাড়িয়ে সফলতা ছিনিয়ে আনার গল্প শুনিয়েছেন ঢাকা পোস্ট-কে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম।
ঢাকা পোস্ট : সরকারি ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের সফলতার শুরুর গল্পটা যদি বলতেন?
শিরীন আখতার : ব্যাংকের চাকরির শুরুটা ছিল সাদামাটা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর শেষ করি। স্বাভাবিক নিয়মে আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রিক্রুটমেন্ট কমিটির (বিআরসি) মাধ্যমে ১৯৮৮ সালে পরীক্ষা দিই। তবে মাস্টার্সের রেজাল্ট হওয়ার আগেই বিআরসি’র ভাইভা হয়ে যায়। অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে যোগ দিই। এভাবেই শুরু।
ঢাকা পোস্ট : নারীকর্মী হিসেবে ব্যাংকের চাকরির শুরুতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন কি না? ওই সময়ের কিছু অভিজ্ঞতার কথা যদি বলতেন...
শিরীন আখতার : শুধু নারী হিসেবে নয়, সব মানুষের কর্মক্ষেত্রের শুরুর গল্পটা একই। প্রথমে তার নতুন চাকরি; পরিবার, পরিবেশ— অনেক বিষয় থাকে। এগুলো সমন্বয় করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হয়। আমিও এভাবে এ পর্যায়ে এসেছি।
শুরু থেকেই কাজের প্রতি আমার একাগ্রতা ছিল। সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার দৃঢ় সংকল্প ছিল। মানুষের সঙ্গে মেশার সহজাত প্রবণতা ছিল। যখনই আমার কাছে কেউ কোনো কাজ নিয়ে এসেছেন, আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি তার সমাধান দিতে।
ব্যাংক খাতের কর্মপরিবেশ আমি সবসময় ভালো পেয়েছি। কর্মীরা আমাকে সহজভাবে গ্রহণ করেছেন। বৈরী পরিবেশ তো থাকবেই। তবে যেকোনো পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়।
ঢাকা পোস্ট : চাকরি ও সংসার; কীভাবে সমন্বয় করেছেন?
শিরীন আখতার : এটা তো কঠিন কাজ। তবে ইচ্ছা থাকলে সহজ করে নেওয়া যায়। প্রকৃত অর্থে আমাদের মেয়েদের দুটি চাকরি করতে হয়। সংসার ও নিজ কর্মক্ষেত্র। দুটি কাজ সমন্বয় করেই আমাদের চলতে হয়।
ঢাকা পোস্ট : সরকারি ব্যাংকের সর্বোচ্চ পদে আছেন। এর পেছনে কার অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন?
শিরীন আখতার : অনুপ্রেরণা বললে প্রথমে আসবে আমার মা ও বাবার কথা। আমার মা গৃহিণী ছিলেন। আমরা আট ভাই-বোন। এত বড় সংসার তিনি একাই সামলাতেন। আশির দশকে সক্রিয় রাজনীতিও করেছেন। সামাজিক কার্যক্রমেও ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল। এলাকার মানুষের যেকোনো সমস্যা সমাধানে তিনি সবার আগে এগিয়ে যেতেন। সংসার, সামাজিক দায়বদ্ধতা— সবকিছু তিনি সমন্বয় করেছেন দৃঢ়তার সঙ্গে। তার এসব কার্মকাণ্ড আমাদের অনুপ্রাণিত করত।
বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করতেন। তিনি সবসময় সামনে এগিয়ে যেতে আমাদের উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলতেন, আমার সন্তানরা আমার চেয়ে আরও উপরের পদে চাকরি করবে। ভালো মানুষ হবে। মধ্যবিত্ত পরিবারে আমাদের বেড়ে ওঠা। আমরা সব ভাই-বোন এখন প্রতিষ্ঠিত। মা-বাবার অনুপ্রেরণা ও আশীর্বাদে তা সম্ভব হয়েছে।
আর সহযোগিতার কথা যদি বলেন, বলতে হবে সবার কথা। সবার কাছ থেকেই সহযোগিতা পেয়েছি। আমার অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, সবাই সহযোগিতা করেছেন। কারণ, তাদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আশা সম্ভব ছিল না। পরিবার থেকে শুরু করে অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, যার যার জায়গা থেকে সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এ কারণেই আজ আমি এখানে পৌঁছাতে পেরেছি।
ঢাকা পোস্ট : বর্তমানে ব্যাংকের কর্মপরিবেশ নারীদের জন্য কতটা উপযোগী বলে মনে করেন?
শিরীন আখতার : এখন চাকরিতে ছেলে-মেয়েদের জন্য আলাদা আলাদা কর্মপরিবেশ— এমনটি দেখার তো কোনো সুযোগ নেই। সবাই এখন সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন। মেয়েদের জন্যও ব্যাংকিং সেক্টরে করপোরেট কালচার তৈরি হয়েছে। এ খাতে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ বেড়েছে। তবে ভালো কিছু যদি অর্জন করতে হয়, উপরের পদ যদি পেতে হয়; তাহলে তার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আগ্রহ থাকা অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে তাকে সময়ানুবর্তিতা, একাগ্রতা, সততা, একনিষ্ঠতা এবং টেবিল ওয়ার্কের প্রতি সাধনা ও ভালোবাসা থাকতে হবে। তাহলে তাকে কেউ আটকাতে পারবে না। সফলতা নিজেই তার কাছে ধরা দেবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশে প্রথম নারী স্পিকার, নারী বিচারপতি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন। সর্বস্তরে নারীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন তিনি। এ ধরনের নীতি-সহায়তার কারণে আজ আমরা এ পর্যায়ে পৌঁছেছি। তাই আমি বলব, সবার সুযোগ আছে। সফলতা পেতে দক্ষতার সঙ্গে নারীদের সামনে এগিয়ে যেতেই হবে।
যে দেশের নারীরা যত বেশি শিক্ষিত, সেই দেশ তত উন্নত। একজন কর্মজীবী নারী শুধু সংসারের উন্নতিতে অবদান রাখেন না। জাতীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। তাই প্রতিটা নারীর দক্ষতা প্রমাণে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আরও বেশি সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
এসআই/এমএআর/