চলমান সংকটে ইউক্রেনে রকেট হামলার শিকার বাংলাদেশি জাহাজে থাকা নাবিকদের দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। নাবিকদের উদ্ধারের খোঁজ-খবর নিতে বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) চট্টগ্রাম কার্যালয়ে এসেছিলেন নাবিকদের কয়েকজন স্বজন। এ সময় তারা উদ্ধারের এ দাবি জানান।   

শিপিং করপোরেশন অফিসে ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জাহাজের নাবিক মো. মাসুম বিল্লাহর বাবা মো. ওবায়দুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার বাড়ি ফেনীতে। তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট মাসুম। সে জাহাজে কাজ করে। হামলার পর আমার ছেলে খুব আতঙ্কে আছে। 

হোয়াটস অ্যাপে কথা হয়েছিল জানিয়ে মাসুমের বাবা বলেন, ছেলে জানিয়েছিল হামলায় নাকি একজন মারা গেছে। বাকিরা কান্নাকাটি করছে। এ কথা শোনার পর বাবা হিসেবে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।

তিনি বলেন, ছেলেকে কাছে পেতে খুব মন চাচ্ছে। কোনোভাবেই মনকে বোঝাতে পারছি না। তাই সকাল সকাল শিপিং করপোরেশনে এসেছি। এখানে অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন, যেভাবেই হোক নাবিকদের জাহাজ থেকে ফিরিয়ে আনা হবে।

 

তিনি আরও বলেন, একজন নাবিক মারা গেছেন। এখন আমাদের দাবি, আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। সরকারের কাছে দাবি জানাই, যেন আমার ছেলেকে ফিরিয়ে এনে দেয়।

জাহাজে থাকা ফেনীর আরেক নাবিক সাজ্জাদের ভাই নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাইয়ের সঙ্গে রাত আটটার দিকে কথা হয়েছিল। তখন সে পরিবারের সদস্যদের খোঁজ খবর নিয়েছিল। আমাদের বিস্তারিত কিছু বুঝতে দেয়নি। 

তিনিও ভাইয়ের খোঁজ নিতেই ফেনী থেকে শিপিং করপোরেশনে এসেছেন। কর্মকর্তারা উদ্ধারের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দাবি একটাই, সবাইকে দ্রুত উদ্ধার করে পরিবারের কাছে যেন ফিরিয়ে আনা হয়। 

ওই জাহাজে থাকা আরেকজন রাজবাড়ীর মাসুদুর রহমান। দুই সন্তানের জনক তিনি। তার ভায়রা আবদুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবশেষ আজ সকালে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নিরাপদ গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। তারা আতঙ্কে আছেন। শিপিং করপোরেশন নিরাপদে উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছে।

তিনি বলেন, নিরাপদে তাদের কোনো একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া হোক, এটাই আমাদের চাওয়া। সবারই একটাই ভয়, আবার যদি হামলা হয়, তাহলে কী হবে? তাদের খাবারও নষ্ট হয়ে গেছে। 

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ান সেনারা বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানের কারণে বাংলার সমৃদ্ধি নামে বাংলাদেশি জাহাজটি ইউক্রেনে আটকে পড়ে। ওই জাহাজে স্থানীয় সময় বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে হামলা হয়। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান মারা যান। 

হামলায় বাকিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নাবিকরা ভিডিও কলে উদ্ধারের আকুতি জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার হামলা বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি। তবে শিপিং করপোরেশন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে আটকে পড়া নাবিকদের ফিরিয়ে আনা হবে। 

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ওই জাহাজে এখন ২৮ জন বাংলাদেশি নাবিক রয়েছেন। জাহাজটি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দর চ্যানেলে নোঙর করা আছে। বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহনের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। 

অলভিয়া থেকে কার্গো নিয়ে ইতালি যাওয়ার কথা ছিল জাহাজটির। চলমান অস্থিরতা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেয় শিপিং করপোরেশন। তবে ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের জাহাজটি।  

কেএম/আরএইচ/জেএস