পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, আমাদের কোনো পুলিশ সদস্য যখন আত্মাহুতি দেন তখন শুধুমাত্র একটা মুখচ্ছবি হারাই না। আমরা আমাদের একজন কমরেডকে হারাই, প্রিয়জন, সাথী, সহকর্মী, বন্ধুকে হারাই।

একই সঙ্গে একটি পরিবার প্রিয় মানুষটিকে হারায়। স্বামী তার স্ত্রীকে কিংবা স্ত্রী তার স্বামীকে হারান, সন্তান বাবা কিংবা মাকে, বাবা-মা তার ভালোবাসার ধন সন্তানকে হারায়। এটি একটা বিশাল ক্যানভাস থেকে আমরা হারিয়ে ফেলি।

বিভিন্ন দেশের পুলিশে কর্মরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সম্মানে তৈরি পুলিশ মেমোরিয়ালের উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মিরপুর-১৪ পুলিশ স্টাফ কলেজ কম্পাউন্ডে তৈরি এ মেমোরিয়ালের উদ্বোধন করেন তিনি। পরে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে পুলিশ মেমোরিয়াল ভবন পরিদর্শন করেন আইজিপি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, পুলিশে চাকরির কারণে যেসব পরিবার ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছেন আমাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই। আমরা সেসব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সব ভালোবাসা দরদ দিয়ে সেসব সদস্যদের স্মরণ করছি।

তিনি বলেন, আজ একটি তাৎপর্যময় গুরুত্বপূর্ণ দিন। আজ আমরা পুলিশ সার্ভিসের জন্য, বাহিনীর জন্য পুলিশ মেমোরিয়াল উদ্বোধন করলাম। বিভিন্ন দেশেই এমন মেমোরিয়াল হল রয়েছে। যখন যুদ্ধাবস্থা হয় দেশে তখন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ডিফেন্স ফোর্সেস অংশ নেয়। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সময়ে যারা দেশে সমাজ-রাষ্ট্র ধ্বংসের জন্য লিপ্ত হয়, তাদের বিরুদ্ধেই পুলিশ ক্রমাগত যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। যেখানেই যুদ্ধ সেখানেই প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, প্রাণহানি ঘটে। বিশ্বব্যাপী পুলিশ লাইন ডিউটিতে প্রাণ হারায়। আমরাও প্রতিবছর শত শত সহকর্মীকে হারাই কর্তব্যরত অবস্থায়। করোনার দুই বছরে আমরা ১০৬ জন পুলিশ সদস্যকে হারিয়েছি। হাজার হাজার সদস্য ইনফেকটেড ও অসুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়ে আবার কর্মে ফিরেছেন। পুলিশ ১৯৭১ সালেও বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রথম বুলেট নিক্ষেপ করেছে। সাহাদাত বরণ করেছে। এই যে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে গড়ে ওঠা পুলিশ বাহিনী প্রথম সাহাদাতবরণকারী বাহিনী। মানুষের জন্য, নিরাপত্তা শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য এখনও আত্মোৎসর্গ করে চলেছে।

আইজিপি বলেন, প্রতি বছর আমরা পুলিশ মেমোরিয়াল ডে পালন করছি। মেমোরিয়াল ডে-তে ওই বছরে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের উপস্থিতিতে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। মেমোরিয়াল ডে পালন করার জন্য ইতোপূর্বে রেপলিকা স্মৃতি তৈরি করা হয়েছিল।

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, আমাদের এখানে যে মেমোরিয়াল হল ও টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে বিভিন্ন সময়ে কর্তব্যরত অবস্থায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আত্মত্যাগ করা সদস্যদের নাম থাকবে। তাদের জীবনবৃত্তান্তের আর্কাইভ রয়েছে। ৭১ স্মরণে ৭১ ফিট টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশ মেমোরিয়াল দর্শনার্থীদের জন্য মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

জেইউ/এসএসএইচ