কর্মরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সম্মানে তৈরি পুলিশ মেমোরিয়ালের উদ্বোধন করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।

রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর মিরপুর-১৪ পুলিশ স্টাফ কলেজ কম্পাউন্ডে তৈরি এ মেমোরিয়ালের উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন সময়ে কর্তব্যকালে জীবন দেওয়া সদস্যদের স্মরণে মোনাজাতে অংশ নেন আইজিপি।

পরে পুরো পুলিশ মেমোরিয়াল ভবন পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় অতিরিক্ত আইজিপি, ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর জীবন দেওয়া সদস্যদের স্মরণ করা হয়। এজন্য তৈরি করা হয়েছে মেমোরিয়াল। এমন ধারণা থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের ১৯৯৩ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে এবং কর্মরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের সম্মান জানানোর উদ্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ ২০১৭ সাল থেকে ১ মার্চ মেমোরিয়াল ডে পালন করছে।

প্রতি বছর মেমোরিয়াল ডে-তে ওই বছরে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের উপস্থিতিতে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। মেমোরিয়াল ডে পালন করার জন্য ইতোপূর্বে রেপলিকা স্মৃতি তৈরি করে পালন করা হয়েছে। জেলা/ইউনিটে একই দিনে রেপলিকা স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে মেমোরিয়াল ডে পালন করা হচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের বিদ্যমান স্মৃতিস্তম্ভ পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ পুলিশ ২০১০ সালে স্থায়ী দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিজ্ঞ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় নকশা প্রণয়ন ও সাইট নির্ধারণ করে ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

মেমোরিয়াল টাওয়ারের গ্লাসগুলোতে দিনের বেলায় টাওয়ার ভেদ করে যেন আলো প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বেলজিয়ামে নির্মিত ডাবল স্যান্ড ব্লাস্ট গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। আলোর বিকিরণ যাতে রাতের বেলায় বহুদূর থেকে দেখা যায় সেজন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা বিশেষ কোণে প্রতিফলিত হয় এমন বীমের লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।

এ স্তম্ভের আন্ডারগ্রাউন্ডে ১৯৯৩-২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ পুলিশে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত বীর পুলিশ সদস্যদের ডাটা সংরক্ষিত রয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন দেশের স্মৃতিজ্ঞ থেকে স্থাপত্যশৈলীর দিক থেকে এটি একটি অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক নকশাকার স্থপতি মো. কামরুল হাসান তন্ময়। বিস্তারিত নকশাকার স্থাপত্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক স্থপতি নওয়াজীশ মাহবুব। ইন্টেরিয়র নকশাকার স্থপতি ফারিবা সামিয়া মি।

মেমোরিয়াল প্রকল্পের সুবিধা

দর্শনার্থীদের জন্য মেমোরিয়াল ভবনে রয়েছে সেন্ট্রাল এসি, লিফট সুবিধা, র‍্যাম্প সুবিধা, নান্দনিক লাইট সম্বলিত টাওয়ার ৭১, নান্দনিক লাইট সম্বলিত সুবিশাল প্লাজা, নান্দনিক সীমানা প্রাচীর ও গেট, আধুনিক গ্যালারি ও সাউন্ড সিস্টেম, থিয়েটার হল, ডিজিটাল আর্কাইভ।

অনন্য এ স্থাপত্য নকশায় নির্মিত পুলিশ মেমোরিয়ালের বেদির মোট আয়তন ২৮ হাজার ৩০০ বর্গ ফুট। প্রায় ১৩.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বেদীর মাঝে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরের সম্মুখযোদ্ধা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের বছর ৭১ এর অনুসরণে টাওয়ারটির উচ্চতা ৭১ ফুট নির্ধারণ করা হয়েছে। রাতের বেলায় টাওয়ার থেকে বিকিরিত আলো বীর শহীদদের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

জেইউ/এসএসএইচ