কোহেলিয়া নদীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান
কক্সবাজারের মহেশখালীর কোহেলিয়া নদীর বড় অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ইউনুসখালী এলাকায় নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ ভরাট করায় এই নদীর মাধ্যমে নৌ যোগাযোগ বিঘ্নিত রয়েছে। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানকার উচ্চ-আদালত তুরাগ নদীর সঙ্গে সঙ্গে দেশের সকল নদ-নদীকে আইনি সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাই, কোহেলিয়া নদীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও জাতীয় নদী জোট।
শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী হলে সংগঠন ২টি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল।
বিজ্ঞাপন
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশে চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসনীয় পদক্ষেপসমূহকে স্থায়িত্বশীল রেখে উন্নয়নকে বাস্তবিকভাবে দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে কল্যাণকর হিসেবে প্রতিবাদ করতে নদীর জীবন্ত সত্তা ও তার আইনি স্বীকৃতির সঙ্গে বাস্তবের অসঙ্গতিসমূহ চিহ্নিত করা ও তা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বিষয়। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ উপকূলের কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ৩৩.৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত কোহেলিয়া নদীর অধিকার বিশ্লেষণ ও এই ক্ষেত্রে নদীর আইনি অধিকারের বহুমাত্রিক ব্যত্যয়ের পর্যালোচনা দেশের নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে উৎকর্ষতা দিবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
তিনি বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালামাল ও পণ্য পরিবহনের উদ্দেশ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক হিসেবে মহেশখালী-মাতারবাড়ি এলাকায় কোহেলিয়া নদীসংলগ্ন রাজঘাট সেতু থেকে মহিরাঘোনা পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিলেও বাস্তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড ইতোমধ্যেই রাস্তা নির্মাণের জন্য কোহেলিয়া নদীর ৭.৪ কিলোমিটার অংশ ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (ওডিএ) প্রোগ্রামের আওতায় মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ (১ম ও ২য় পর্যায়) এই অঞ্চলে অন্যান্য বৃহৎ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। মহেশখালী ও মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে সংযোগের জন্য কোহেলিয়া নদীর উপর চার লেনের এই রাস্তা নির্মাণের অর্থায়নও করছে জাইকা।
শরীফ জামিল বলেন, কোহেলিয়া নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে মহেশখালী ও মাতারবাড়ির কালারমারছড়া, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও হোয়ানক এই চার ইউনিয়নে বসবাসরত দরিদ্র দুই হাজারের অধিক জেলে পরিবার। রাস্তা নির্মাণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে উক্ত জেলে পরিবারসমূহের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় কোহেলিয়া নদী ভরাটের প্রতিবাদে স্থানীয়ভাবে মহেশখালীতে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকা দেশের লবণ শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদী দিয়ে বছরে চার-পাঁচ মাস গড়ে দৈনিক ২০-২৫টি লবণের নৌকা যাতায়াত করত। অত্র এলাকায় ভারী শিল্পায়ন ও নদী ভরাটের কারণে লবণচাষী ও সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, সরেজমিনে দেখা গেছে, মহেশখালী মাতারবাড়ি এলাকায় ইতিমধ্যেই কোহেলিয়া নদীর বৃহৎ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ইউনুসখালী এলাকায় নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ অংশ ভরাট করায় এই নদীর মাধ্যমে নৌ যোগাযোগ বিঘ্নিত রয়েছে। কোনো মাছ ধরার নৌকা বা লবণ বহনকারী নৌযান এখন নদীতে চলাচল করতে পারে না।
জাতীয় নদী জোটের এই সদস্য সচিব আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ দেশের সমস্ত নদীকে ‘আইনি ব্যক্তির’ অধিকার দেওয়ার উদ্দেশ্যে নদীগুলোকে ‘আইনি সত্তা’ এবং ‘জীবন্ত সত্তা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া উচ্চ আদালতের ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তকে বহাল রেখেছেন। বাংলাদেশের পানি আইন-২০১৩ এর মাধ্যমে নদীর প্রবাহের যে অধিকার তাকে সমুন্নত করা হয়েছে। কাজেই কোহেলিয়া নদীর ক্ষেত্রে নদীর অধিকার যদি লঙ্ঘন করা হয়, তা সারা দেশের নদ-নদীর ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই আজকের সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা কোহেলিয়া নদীর অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস্) এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এবং জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদা রোক্সানা খান।
এমএইচএন/আইএসএইচ