২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দফতরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারান ৫৭ জন সেনা সদস্যসহ ৭৪ জন।

বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। তবে এ ঘটনার ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আক্ষেপ রয়েছে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মনে।

শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলছেন, পিলখানায় ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞ নিছক কোনো বিদ্রোহের ঘটনা ছিল না। এটি একটি পরিকল্পিত টার্গেট কিলিং। আর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা কলকাটি নেড়েছে তা জানতে চান তারা। 

শহীদ পরিবারের স্বজনরা বলছেন, যারা এখন বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন, তারা আসলে নেপথ্যের কারিগর নয়। যারা এ ঘটনার আসল কারিগর তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত শহীদ পরিবারের সদস্যদের মনে শান্তি আসবে না।

শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল বনানী সামরিক কবরস্থানে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন শহীদ পরিবারের একাধিক সদস্য। 

এ বিষয়ে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ কর্নেল কুদরত-ই-এলাহীর ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে কোনো ফৌজদারি মামলার মতোই এ মামলার বিচারকার্য হচ্ছে। এটা পৃথিবীর সর্ব বৃহত্তম ক্রিমিনাল মামলা। স্বাভাবিকভাবেই মামলার বিচার কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। ২০১৩ সালে বিচারিক আদালত সর্বপ্রথম এই মামলার রায় দিয়েছেন। ২০২০ সালে জানুয়ারি মাসে হাইকোর্ট ৩০ হাজার পাতার একটি রায় দেন। সেই রায়ে ১১টি সুপারিশ ছিল।

তিনি বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে এ রহস্য উদঘাটনের জন্য আমরা মনে করছি একটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল তদন্ত কমিটি গঠন করা দরকার। এই কমিটির নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে ঘটনার প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করবে। এ ঘটনার পর আর্মি ও বেসামরিক প্রশাসন আলাদা আলাদা দুইটি তদন্ত করেছে। সেই তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। এই তদন্ত প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করতে হবে।

নেপথ্যের কারিগররা অনেক শক্তিশালী উল্লেখ করে তিনি বলেন, নেপথ্যে যারা ছিল তারা অনেক শক্তিশালী এতে কোনো সন্দেহ নেই। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ ঘটনার পেছনে আরও লোক আছে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিচ্ছে, কিন্তু নেপথ্যের কারিগরদের সমাপ্ত করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেই।

পিলখানা হত্যাযজ্ঞে নিহত মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের বড় বোন হোসনে আরা পারভীন বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে কারা গত ১৩ বছরেও আমরা তাদের চিনতে পারিনি। আমাদের একটাই চাওয়া, আপনজন হত্যাকারীদের যেন বিচার দেখে যেতে পারি।

দিকে ঘটনার ১৩ বছর পার হয়ে যাওয়ার পরেও দোষীদের বিচার কাজ এখনো শেষ না হওয়ায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তারা দ্রুত এ বিচার কাজ সম্পন্ন ও দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন। 

এমএসি/এসকেডি