‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ পেয়েছেন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ৯ সংবাদকর্মী। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাদের হাতে সনদ ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। 

বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন করে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ এ পুরস্কার দেওয়া হয়। তার আগে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ২০২১’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন জহিরুল ইসলাম (এসএ টিভি), শাকিল মুরাদ (একাত্তর টিভি), সফি খান (প্রথম আলো) এবং মাসুদুর রহমান (আজকের পত্রিকা)। জাতীয় ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন শাহেদ শফিক (বাংলা ট্রিবিউন), নীলিমা জাহান (দ্য ডেইলি স্টার), সাজ্জাদ পারভেজ (যমুনা টিভি), নাজনীন আখতার (প্রথম আলো) এবং জাহাঙ্গীর আলম (জাগো নিউজ)। 

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রয়োজন সামাজিক উন্নয়ন। কিশোর-কিশোরী ও যুবদের, বিশেষ করে যুব নারীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে সক্ষম করে তুলতে হবে। উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। একটি দেশকে যথাযথভাবে উন্নত করতে হলে জোর দিতে হবে সামাজিক উন্নয়নের দিকেও। বাল্যবিয়ে এই পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায়। দেশকে বাল্যবিয়েমুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অনেকটা পথ এগোলেও করোনা আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে নতুন চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, সমাজের চিন্তা-চেতনা সহসা পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তন আসছে, সবাই এর বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু মূল কারণের সমাধান না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

সাংস্কৃতিক কর্মী শাহনাজ খুশি বলেন, মেয়েরাই এখন নিজেদের অধিকার নিশ্চিতে সচেতন। তারা নিজেরাই এখন পারছে নিজেদের বাল্যবিয়ে রুখে দিতে। গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির এখানে আরও জোরালো ভূমিকা রয়েছে।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, সারাদেশে করা এক জরিপে এসেছে, অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৩৫ শতাংশের মতে যৌন হয়রানির ভয় বাল্যবিয়ের অন্যতম মূল কারণ। ২৫ দশমিক ৬ শতাংশের মতে, সামাজিক বিভাজনজনিত উদ্বেগের কারণে বাবা-মা মেয়েদের অল্প বয়সেই বিয়ে দিয়ে দেন। এই ভয় দূর করতে হবে। বিয়ে যে সমাধান নয়, এই বার্তা জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দিতে পারে গণমাধ্যম।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সরকার, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে। মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারি অনেক উদ্যোগ রয়েছে। অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করে তুলতে হবে। তাদের ক্ষমতায়ন করা জরুরি যেন তারা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে না দেয়। মেয়েদের কোনোভাবেই বোঝা না মনে করে এবং মেয়েদেরকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এই সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম কাজ করে আসছে।

সাংবাদিক জ ই মামুন বলেন, অনেক বাবা-মায়ের ধারণা বিয়ে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। এই অনিশ্চয়তা থেকে মা-বাবাদের মুক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রসহ সবাইকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।  

অনুষ্ঠান থেকে বলা হয়, বিল্ডিং বেটার ফিউচার ফর গার্লস (বিবিএফজি) প্রকল্পটি কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা, ৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদে কাজ করছে। ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে বাল্যবিবাহের সংখ্যা ১৮ বছরের নিচে এক–তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা এবং ১৫ বছরের নিচে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। বাল্যবিবাহ কমিটি শক্তিশালী প্রকল্পটি ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রতি মাসে কতসংখ্যক বাল্যবিবাহ হচ্ছে— তার তথ্য সংগ্রহ করে কমিটি। ঘটক, কাজিসহ বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা গেলে বাল্যবিবাহ কমিয়ে আনা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের হেড অব সেন্ট্রাল অ্যান্ড নর্দান রিজিওন আশিক বিল্লাহ এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। 

এমএইচএন/এইচকে