প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের গণমাধ্যমের বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে মনগড়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন অপতথ্য দিয়ে তৈরি সংবাদ প্রচার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

নেতারা ভারতের মূলধারার মিডিয়ার এমন ‘হলুদ’ সাংবাদিকতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এর তীব্র নিন্দা জানান।

সংগঠন দুটির নেতারা বলেন, ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত তিনটি বিতর্কিত, স্মরণকালের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে আসীন হওয়া স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এ অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী গোষ্ঠী ছাড়া এ দেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সবাই অংশগ্রহণ করে। তাদের একটিই লক্ষ্য- মহান মুক্তিযুদ্ধের ভূলুণ্ঠিত স্বপ্ন বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তর করা।

তারা বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, এ ইস্যুতে ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে মনগড়া, মিথ্যা, ভিত্তিহীন অপতথ্য দিয়ে একের পর এক মিথ্যা সংবাদ তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে। বিশেষ করে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে ভারতের বক্তব্য ও এর পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশের উগ্র জঙ্গীদের দ্বারা আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশের পতাকা ছিঁড়ে ফেলা, কলকাতা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশন কার্যালয়ের সামনে সেখানকার উগ্রবাদী সংগঠনগুলো যুদ্ধংদেহি বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, আমরা মনে করি ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অপপ্রচার ছড়ানোর কারণেই ফেনীর পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, সিলেটের দিকে আসামে ভারতীয় সীমানা থেকে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন উগ্র বক্তব্য ও স্লোগানসহ সারা ভারতেই বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকায় নেমেছে সেখানকার উগ্রবাদীরা।

তারা বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠানের জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ভারতে ভুয়া খবর এক বিপজ্জনক হুমকিতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ নিয়েও দেশটির মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম যাচাই-বাছাই না করেই বিভিন্ন ভুল খবর প্রকাশ করছে। ভুয়া খবর প্রকাশের তালিকায় আছে হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া ইত্যাদির মতো প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমও। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ-সংক্রান্ত ভিত্তিহীন খবর বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। বিজনেস ইনসাইডার ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাইক্রোসফটের এক সমীক্ষায় উঠে এসেছে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ায় ভারতেই।  মাইক্রোসফটের জরিপ অনুযায়ী, ৬০ শতাংশেরও বেশি অনলাইনে ভুয়া খবরের মুখোমুখি হয়েছেন; যেখানে এ হারের বৈশ্বিক গড় ৫৭ শতাংশ। জরিপে অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও বেশি ভারতীয় জানিয়েছেন, তারা ইন্টারনেট প্রতারণার শিকার হয়েছেন— যা বৈশ্বিক গড় ৫০ শতাংশের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ৪২ শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, তারা ফিশিং বা স্পুফিংয়ের সম্মুখীন হয়েছেন। এ জরিপে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, অনলাইন বুলিং, অনাকাঙ্ক্ষিত যৌন বার্তা, মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া খবরসহ বিভিন্ন অনলাইন ঝুঁকির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা বলেন, ভারত সরকারের বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড এবং সেখানকার মিডিয়ার ভূমিকায় আমাদের মনে হয়েছে, তারা আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। এতে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করানো সহজ হবে। এসব ঘটনার পেছনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ইন্ধন আছে বলেও দৃঢ়ভাবে প্রমাণ হয় বলে আমরা বিশ্বাস করি।

নেতারা বলেন, ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অবদান আমরা সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। আমরা আশা করব, নতুন বাংলাদেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি ভারতের সরকার ও গণমাধ্যম শ্রদ্ধাশীল হবেন। একইসঙ্গে ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশেষ করে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সত্যনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সংবাদ প্রচার করবে। এটা উভয় দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

এসএসএইচ