জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা ও তার শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মিলনায়তনে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে দুপুর ১২টার কিছু পরে একটি ফ্রিজিং ভ্যানে রুহুল আমিন গাজীর মরদেহ প্রেস ক্লাবে আনা হয়। যদিও তার জানাজা প্রেস ক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মিলনায়তনে আয়োজন করা হয়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিকদের সংগঠন জাতীয় প্রেস ক্লাব, ডিআরইউ, ডিইউজে, বিএফইউজে নেতারা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধানরা।

জানাজার আগে কবি আব্দুল হাই সিকদার বলেন, রুহুল আমিন গাজী সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার বলেন, রুহুল আমিন গাজী একজন সাহসী সাংবাদিক। তিনি দীর্ঘসময় ধরে কারাবরণ করেছেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি দেশের জন্য, জাতির জন্য কাজ করেছেন। দেশের মানুষের পক্ষে সবসময় কথা বলেছেন। জাতি সারাজীবন তাকে মনে রাখবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ বলেন, ভালো লোকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মহান রাব্বুল আলামিন রুহুল আমিন গাজী ভাইকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুক।

রুহুল আমিন গাজীর ছেলে আদনান আবরার বলেন, তিনি সবসময় সত্য কথা বলার চেষ্টা করতেন। তিনি দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের জন্য কাজ করবেন, সবসময় এ কথা বলতেন। আমি গতকাল বাবাকে দেখে অনেকে কষ্ট পেয়েছি। আর কোনোদিন আমার বাবা আমাকে ডাকবেন না। আপনারা আমার বাবকে ক্ষমা করবেন। তাকে আল্লাহ যাতে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন গাজী বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান সাংবাদিক ছিলেন। তিনি সবসময় দেশের পক্ষে কথা বলেছেন। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি গণমাধ্যমের জন্য সবসময় লড়াই করেছেন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। তিনি কারা নির্যাতিত ছিলেন। আমরা গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করব।

সাংবাদিক নেতারা বলেন, এখানে যারা উপস্থিত হয়েছেন সবাইকে ধন্যবাদ। আমরা একসঙ্গে সময় অতিবাহিত করেছি। রাজপথে তিনি আন্দোলন করতে গিয়ে কারাবরণ করেছেন। তিনি আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, রুহুল আমিন গাজী কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ব্যাক পেইন, উচ্চ ডায়াবেটিস, লবণ ঘাটতি (ইলেক্ট্রোলাইট) সমস্যাসহ নানা রোগে ভুগছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দীর্ঘ কারাবাসে তার শারীরিক জটিলতা বেড়ে যায়। পরে গত সোমবার তাকে রাজধানীর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৯টায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

চাঁদপুর সদর উপজেলার গোবিন্দিয়ায় রুহুল আমিন গাজীর জন্ম। তার বাবার নাম কফিল উদ্দিন এবং মা আয়েশা খাতুন। তিনি সাংবাদিকদের শীর্ষ স্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) চতুর্থবারের মতো সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এ ছাড়া তিনি বিএফইউজের মহাসচিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমৃত্যু দৈনিক সংগ্রামের চিফ রিপোর্টার ছিলেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজা শেষে তার মরদেহ শাহজাহানপুর কবরস্থানে দাফনের উদ্দেশে নেওয়া হয়েছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, সেক্রেটারি ড.শফিকুল ইসলাম মাসুদ, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ।

এমএইচএন/এসএসএইচ