বাবা হত্যার বিচার চেয়ে আর কোনো সাংবাদিকের মেয়েকে যেন রাস্তায় দাঁড়াতে না হয়। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে দাঁড়িয়ে এ কথা বলেন জামালপুরে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।

সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন বন্ধ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে এ  সমাবেশের আয়োজন করা হয়।  

রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, আমার বাবাকে যখন কবর দেওয়া হয় সেদিন থেকে যে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি, আজ পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আমি যেন শেষ সাংবাদিকের মেয়ে হই, আমার মতন কোনো সাংবাদিকের মেয়েকে যেন আর রাস্তায় না দাঁড়াতে হয়। 

জান্নাত আরও বলেন, আমার বাবার ওপর আগেও হামলা হয়েছে, কিন্তু সেই হামলার কোনো বিচার আমরা পাইনি। আমার বাবা যদি সেই হামলাগুলোর বিচার পেত তাহলে অকালে তাকে যেতে হতো না। আমার বাবার ওপর এতগুলো হামলার মূল কারণ ছিল আমার বাবা স্বাধীনতার স্বপক্ষের লোক ছিল। তিনি সব সময় বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতো। এই সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই আমার বাবার ওপর বিভিন্ন সময় হামলা হয়েছে। তখন আমার বাবা থানায় জিডিও করেছিলেন। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবার থেকে যে মামলা করা হয় তাতে আগের সেই জিডিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। 

নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে জান্নাত আরও বলেন, সিসিটিভির বাইরে যে পরিকল্পনাকারী খলনায়িকা এবং খলনায়ক আছেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে। তাদের দ্রুত আইনের আওতা না আনলে তারা বিভিন্ন ভাবে মামলাকে প্রভাবিত করছে এবং সামনে আরও করবে। তাই আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে চাওয়া এই মামলার যেন দ্রুত বিচার করা হয়। পাশাপাশি বাবু চেয়ারম্যান এবং শাহিনা বেগমকে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। 

সমাবেশে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্তকারী সংস্থা ওই মামলাটির জন্য ১০২ বার সময় নিয়েছে। আমাদের বুঝতে বাকি নেই যে, তারা কেমন তদন্ত করছে। আর কেনই বা এই তদন্ত এখনও শেষ হচ্ছে না। 

তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যার নেপথ্যে যারা আছেন তাদের সর্বপ্রথম গ্রেপ্তার করতে হবে। আর মামলার এজহারভুক্ত সব আসামিকে এখনই আইনের আওতায় আনতে হবে। এমনকি নাদিম হত্যার ওই সিসিটিভির ফুটেজ শুধু নয়, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের নির্দেশ দাতাদেরও অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। 

সাংবাদিক হত্যার কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক হত্যার সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি দেশে ও দেশের বাইরে নষ্ট হয়েছে। তাই দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য সাগর-রুনি, নাদিমসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার করতে হবে। এবং এসব হত্যার পেছনে যারা কলকাঠি নেড়েছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। 

সমাবেশ শেষে বিএফইউজে এবং ডিইউজের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করে। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক। আরও বক্তব্য রাখেন- বিএফইউজের মহাসচিব দ্বীপ আজাদ, ডিইউজের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খাইরুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু প্রমুখ। 

গত ১৪ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নেতৃত্বে তার ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাতসহ ১০-১২ জন সাংবাদিক নাদিমের ওপর হামলা করে। এ সময় নাদিমের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন চেয়ারম্যানের ছেলে রিফাত। পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিমের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম ২২ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ওএফএ/এনএফ