ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়নের জন্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই না সাংবাদিকতা কোনো জায়গা থেকে নিয়ন্ত্রিত হোক। সেটা সরকার হোক কিংবা মালিক পক্ষ।

তিনি বলেন, সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশাকে যদি সম্মান না দিই, তাহলে সমাজ কীভাবে এগিয়ে যাবে? একজন সাংবাদিক সমাজ ও রাষ্ট্রের সত্য চিত্র তুলে ধরেন। যার ফলে তার বন্ধুর চেয়ে শত্রুর সংখ্যা অনেক বেশি। এ শত্রু সবারই আছে। এ ধরনের পেশা যারা বেছে নেবেন, তাদের যদি আমরা সম্মান দিতে না পারি তবে তিনি কেন সাংবাদিকতায় থাকবেন?

সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে স্বজন ও সুহৃদদের আয়োজনে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক প্রয়াত শাহ আলমগীর স্মরণে 'সাংবাদিকতায় শিক্ষণ, প্রশিক্ষণ ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট একটি নিয়ন্ত্রণমূলক আইন। আজকে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার হচ্ছে সেটা নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু না কিছু আইন থাকা দরকার। কিন্তু কোনোভাবেই সেটি যেন সাধারণের মত প্রকাশের যে অধিকার আছে, সেটি খর্ব না করে। সংবিধান সর্বোচ্চ আইন। সেটিকে আইন অনুসারে আমরা অধিকারগুলো পাচ্ছি কি না সেটা দেখা দরকার। অ্যাক্টের যেমন দরকার আছে, তেমনি সেটি যেন আমাদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ন না করে সেটাও দেখতে হবে।

সভায় যুগান্তরের সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ধারা যে বহু মাত্রিক হতে পারে সেটা শাহ আলমগীর দেখিয়েছন। শাহ আলমগীরকে মূল্যায়ন করতে হলে সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করা শিখতে হবে।

আলোচনায় শাহ আলমগীরের বোন তাহমিনা চৌধুরী বলেন, দাদা একজন সৃজনশীল মানুষ ছিলেন। তার অনেক কবিতাই পরে গান হয়েছে, সেগুলো আমরা জানতাম না। সেটা পরে জেনেছি। বাবা-মা পারলে আমাকে অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বিয়ে দিয়ে দেন, শুধুমাত্র দাদার জন্যই আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। আমার জন্য সব বকা খেতেন উনি।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, শাহ আলমগীর একদিকে ভালো সংগঠক ছিলেন অন্যদিকে ভালো সাংবাদিকতার বিষয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি সবাইকে সম্মান করতেন। কোনো কারণে যদি কাউকে অপছন্দ হত, সেটি তাকে বুঝতে দিতেন না। সবাইকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। এত অল্প বয়সে উনি চলে যাবেন, এটা কখনো ভাবিনি।

ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, শাহ আলমগীরের মতো মানুষ প্রতিটি সংবাদ প্রতিষ্ঠানে থাকলে সবাই ইথিকস মেনে চলত। তার মতো এখন কেউ নেই বলেই কোনো প্রতিষ্ঠান ইথিকস মেনে চলে না। এখন যে কেউ সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সকলেরই এটির বিরোধিতা করা উচিত। সাংবাদিকতার ইথিকস মানার জন্য বড় বড় জায়গাগুলোয় ভালো মানুষ বসাতে হবে। বর্তমানে আমরা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না, আমাদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি করে না। কিন্তু শাহ আলমগীরের দিকে হাত তুলে কেউ বলতে পারে না, তিনি দুর্নীতিবাজ ছিলেন। তাই আমাদের তার মতো সৎ হতে হবে।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, আজকে সাংবাদিকরা যদি শাহ আলমগীরের 'ছড়িয়ে দেওয়া'র নীতি অনুসরণ করেন তাহলে অন্তত সাংবাদিক ইউনিয়ন নিয়ে যত বদনাম ও সমালোচনা আছে সেসব থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। আমরা জানি রাজনৈতিক বাস্তবতা কঠিন। কিন্তু সংগ্রাম তো করাই যায়। সব কিছু আপাদমস্তক মেনে নেওয়া সেটি সাংবাদিক কিংবা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাজ নয়।

গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল। এছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন শাহ আলমগীরের সহধর্মিণী ফৌজিয়া বেগম মায়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ প্রমুখ।

এমএইচএন/এসকেডি