এডগার এলান পো’র সৌন্দর্যের ছন্দময় বৃষ্টি, শেলির পরিতৃপ্তি কিংবা বুদ্ধদেব বসুর অনুভব যাই বলি না কেন; ‘দুঃখ ফোটার দিনে আমি তোমার হয়ে যাই’ যেন কবিতার এই সংজ্ঞাগুলোর পূর্ণতা দিয়েছে। প্রিয়তমার সঙ্গে সাবলীল কথোপকথনও যে পাঠককে নাড়া দিয়ে যেতে পারে, ভাবাবেগ সৃষ্টি করতে পারে তা কবি খান মুহাম্মদ রুমেল দেখিয়েছেন।

প্রিয়তমার ‘ঘুমাওনি কেন? রাত তো মধ্যাহ্ন ছুঁলো?’ প্রশ্নের জবাবে কবি বলছেন- ‘সবাই তো অনেক কিছুই ছোঁয়! আমি কেবল ছুঁই না তোমায়!’। একই কবিতার শেষাংশে কবি লিখেছেন- মেয়েটি ছেলেটির স্বপ্ন হতে চায়, ঘুম জড়ানো রাতে! দুজনেই চাতক জল অপেক্ষার জীবন! খুবই সাবলীল কথা! কিন্তু এই সাবলীল কথাগুলোই যেন পাঠক হৃদয়ে ভাবাবেগের ঢেউ তুলে দেয়।

আরেকটি কথোপকথন কবিতার চরণে কবি তার প্রিয়তমার কাছে জানতে চায় ‘আমার কাছে তো আসোনি!’ জবাবে প্রিয়তমা বলছে ‘এসেছি, তুমি টের পাও না!’ শেষাংশে কবি বলছেন- ‘ছেলেটা মেয়েটা পাশাপাশি থাকে, ছেলেটা মেয়েটার মাঝে যোজন যোজন দূর!’ ঠিক যেন আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি দুটি লাইন। এভাবেই অনেকগুলো কথোপকথন কবিতায় আমাদের অনুভব আর পরিতৃপ্তিকে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি।

রাধার দোলনচাঁপা হাসি কবিকে মুগ্ধ করেছে। কবি হৃদয়ের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে রাধাকে। রাধাকে কবি তার জোছনা বানাতে চেয়েছেন, চেয়েছেন আকাশ বানাতে কিম্বা বাদল দিনের বৃষ্টি। কিন্তু প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম ‘রাধার জীবন কৃষ্ণের জীবন, মিলে না স্বপ্ন পথের মোহনায়’। কবিকেও পুড়তে হয়েছে সেই দুঃখে! কবির আক্ষেপ ‘...তারপর গল্পটা অসমাপ্ত রেখেই- বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুজন! চারপাশে চেয়ে দেখি- রাই, তুমি কোথাও নাই।’

শুধু রাধা-প্রেমই নয় কবির মানস-পটে নাড়া দিয়েছে প্রকৃতি-প্রেম, স্মৃতি-কাতরতা! কবিকে ভাবিয়েছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস, রাজনৈতিক অস্থিরতা। খান মুহাম্মদ রুমেল একজন রাজনীতি ঘনিষ্ঠজন। তার কবিতায় রাজনীতির ছাপ প্রত্যাশা ছিলো। সেই প্রত্যাশাটা কবি পূরণ করেছেন তার ‘দুঃখ ফোটার দিনে আমি তোমার হয়ে যাই’ বইয়ে।

‘শীতলক্ষ্যার গহীন জলে চিকচিক করে আন্ধার’ অথবা ‘যতই মারো, যতই পোড়াও অনিমেষ আরতিবালারাই বাংলাদেশ’ কিম্বা ‘আদতে আমরা অসভ্য সময়ে বাঁচি’ কবির এই লাইনগুলো যেনো হাজার লাইনের সমান। এমনই সর্বোত্তম ভাবের সঙ্গে সর্বোত্তম শব্দের সংযোগ ঘটিয়েছেন কবি খান মুহাম্মদ রুমেল।

দুঃখ ফোটার দিনে আমি তোমার হয়ে যাই বইটি প্রকাশ করেছে অনিন্দ্য প্রকাশ। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন নন্দিত প্রচ্ছদ শিল্পী ধ্রুব এষ। আশি পৃষ্ঠার বইটি সাজানো হয়েছে সত্তরটি কবিতা দিয়ে। পরিপাটি ছাপা, বাঁধাই, মুদ্রণের মতোই পরিপাটি বইটির সবকটি কবিতাও। আধুনিক কবিতার পাঠকদের কাছে বইটি হতে পারে একটি সুখপাঠ্য বই। আবৃত্তি-যোগ্য কবিতার বইও বলা চলে এই বইটিকে। বইটির মুদ্রিত মূল্য তিনশ’ টাকা। সর্বোপরি বইটিকে একটি পয়সা উসুল বই বলা চলে।