করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শারীরিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আমাদের প্রভাবিত করেছে। মহামারীটি বিশ্বব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাও বাড়িয়েছে এবং এটি দীর্ঘদিন পর্যন্ত চলতে পারে, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সিএনবিসির দেওয়া রিপোর্ট বলছে, বিশ্বব্যাপী মনস্তাত্ত্বিক এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মহামারী চলাকালীন আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখছেন। এক্ষেত্রে নতুন এবং পুরানো উভয় রোগীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং হতাশার বৃদ্ধির সমস্যা দেখা যায়। 

নিউইয়র্কে কর্মরত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ভ্যালেন্টাইন রাইতেরি বলেন, আমি আমার জীবনে এতটা ব্যস্ত ছিলাম না এবং আমি আমার সহকর্মীদের এত ব্যস্ত থাকতে দেখিনি।

মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে অসংখ্য গবেষণা করা হয়েছে। অক্টোবরে দ্য ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, করোনা মহামারীজনিত কারণে ২০২০ সালে ২০৪টি দেশ এবং অঞ্চলে হতাশা এবং উদ্বেগজনিত ব্যাধির বৈশ্বিক প্রকোপ দেখা গেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, উক্ত বছরে মানসিক স্বাস্থ্য নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে, এমনকী বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে আনুমানিক ৫৩ মিলিয়ন বড় ধরনের বিষণ্নতাজনিত ব্যাধি এবং ৭৬ মিলিয়ন উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে। বিশেষজ্ঞরা ব্যাখ্যা করেছেন যে ২০২০ সালের বসন্তে মহামারীর শুরুতে, এটি কতদিন স্থায়ী হবে সে সম্পর্কে কারোই ধারণা ছিল না।

রাইতেরি বলেন, ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রথম কয়েক মাসে যখন আশ্চর্যজনক পরিমাণে স্থিতিস্থাপকতা ছিল, সেসময় প্রতিদিনের সামাজিক যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময়ের অনিশ্চয়তা এবং পরিবর্তনের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটি বিশাল প্রভাব পড়ে যা মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখে। এরপর কীভাবে সংযোগ করতে হয় সেটি তারা বুঝে উঠতে পারে না। মানুষের মধ্যে থাকা এবং অপরিচিত বা হালকা পরিচিতদের সঙ্গে সাধারণভাবে যোগাযোগ করার অভ্যাস রাখতে হবে।

মহামারীর কারণে অনেক লোককে তাদের জীবনে এমন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল যা তারা আগে এড়াতে সক্ষম হয়েছিল, যেমন মদ্যপান, সম্পর্কের সমস্যা, বিচ্ছিন্নতা এবং একাকীত্ব। লন্ডন-ভিত্তিক ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এবং দ্য বোডার্ট প্রাকটিসের প্রধান নাটালি বোডার্ট বলেন, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসাবে কাজ করে, আমাদের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস ভালোকে গ্রহণ এবং ক্ষতিকর জিনিসগুলো বর্জন করতে সাহায্য করে।

লন্ডনের সাইকোলজিস্ট ক্যাথরিন প্রিডির মতে, এটি একটি পুরো প্রজন্মের (যারা করোনা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে) মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, যদিও এটি আমাদের জীবনের দুই বছর নিঃশেষ করে দিয়েছে, কিন্তু আমি মনে করি এটি একটি বড় প্রভাব ফেলবে।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রচুর রোগীদের সাহায্য করার জন্য চাপের মধ্যে রয়েছেন। যুক্তরাজ্যের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট অ্যালেক্স ডেসাটনিক সিএনবিসিকে বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, অনেক তরুণের মানসিক ক্ষতির সমাধান করতে অন্তত একটি প্রজন্ম লেগে যাবে, এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে