জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা খাবারের জন্য বিখ্যাত। বটতলা তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে বছরের পর বছর। ঢাকার অদূরে অবস্থিত এ ক্যাম্পাসে ছুটির দিনে যেন পা ফেলা দায়!  সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কর্মব্যস্ত মানুষেরা ছুটে আসেন এ ক্যাম্পাসে। সঙ্গে থাকে অতিথি পাখি ও স্বাধীনতার নানা স্তম্ভ দর্শন এবং সবুজ শ্যামলে মোড়া লাল ইটের ক্যাম্পাস পরিদর্শন। শেষে বটতলায় খাওয়া। কম মূল্য আর স্বাস্থ্যকর খাবারের জন্য বটতলা পছন্দের শীর্ষে থাকে আগত মানুষের।

ভোজনপ্রেমী দর্শনার্থীদের আকর্ষণ থাকে বাহারি সব ভর্তার দিকে। জানা-অজানা এসব বাহারি ভর্তার সাজে দোকানগুলো তখন প্রস্তুত। বেলা ১১টা থেকে জমে ওঠা ভর্তার দোকানগুলো মধ্য রাত অবধি জমজমাট থাকে।

নামকরণ যেভাবে হলো

বটতলার নামকরণ কবে বা কীভাবে হয়েছে তা জানা না গেলেও লোকমুখে শোনা যায়, আগে এখানে বড় বট গাছ ছিল। সেখান থেকেই এই বটতলার নামকরণ। প্রথমে চা-নাস্তার জন্য দুই-তিনটি দোকান থাকলেও বর্তমানে প্রায় অর্ধশত খাবার হোটেল আছে এখানে। ডাইনিং ও ক্যান্টিনের সঙ্গে খাবারের জন্য শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় এই বটতলা।

কত রকম ভর্তা?

দোকানিদের দাবি শতাধিক রকমের ভর্তা রয়েছে দোকানগুলোতে। তবে স্বচক্ষে শতাধিক নয় বরং ২৫ থেকে ৩০ প্রকারের ভর্তার খোঁজ মিলবে এসব দোকানে। এর মধ্যে রয়েছে বাদাম ভর্তা, সরিষা ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, ডাল ভর্তা, শিম ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা, কালিজিরা ভর্তা, বেগুন ভর্তা, ঢেঁড়শ ভর্তা, টমেটো ভর্তা, আলু ভর্তা, লাউশাক ভর্তা, কলা ভর্তা, কচু ভর্তা, রসুন ভর্তা, ডিম ভর্তা, মরিচ ভর্তা। এ ছাড়া ইলিশ মাছের ভর্তা, শুঁটকি মাছের ভর্তা, চিংড়ি মাছের ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, রুই মাছের ভর্তা, চিকেন ভর্তা, লইটা শুঁটকিসহ বাহারি ভর্তা। এ যেন পুরো ভর্তার উৎসব।

শুধুই কি ভর্তা?

বটতলায় মোট ৩৫টি খাবারের দোকান রয়েছে, যার সবগুলোতে পাওয়া যায় এসব ভর্তা। প্রকারভেদে এসব ভর্তার দাম ৫ থেকে ১০ টাকা। শুধু ভর্তা নয়, আরও নানা পদের খাবার মিলবে বটতলায়। ভর্তার পাশাপাশি রয়েছে মুখরোচক সব খাবারের আয়োজন রয়েছে সেখানে। মাংসের মধ্যে রয়েছে গরু মাংস, হাঁসের মাংস, মুরগির মাংস, কোয়েল কিংবা কবুতরের মাংস। এছাড়া নদী ও সামুদ্রিক মাছের পসরা সাজানো দেখা যাবে এসব দোকানে। এর মধ্যে পাঙ্গাস, চিংড়ি, কই, সরপুটি, তেলাপিয়া, শোল, রুই, ইলিশ, সুরমা ও কোরাল মাছ। দামেও তুলনামূলক কম এসব খাবারের।

বিক্রেতার কথা

বটতলার ‘বাংলার স্বাদ’ নামক দোকানের মালিক ইমাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের দোকানে ২৫-৩০ প্রকার ভর্তা নিয়মিত করি। ভর্তাগুলো সুস্বাদু হয়, এজন্য ক্রেতাদের ও বেশ ভিড় থাকে। অনেকে ঢাকা কিংবা ঢাকার বাইরে থেকে ছুটে আসেন বটতলার ভর্তা খেতে। এজন্য আমরা খাবারের মান সবসময় ভালো করার চেষ্টা করি। পাশাপাশি ভর্তার দামও অনেক কম। এজন্য লোকজন ভর্তা বেশি পছন্দ করে।’

দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ

বটতলায় ৩৫টি দোকানের খাবারের মান ও দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে মওলানা ভাসানী হল নিয়ন্ত্রণ করে ১২টি দোকান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৩ দোকান, এ ছাড়া আ ফ ম কামাল উদ্দীন হলের নিয়ন্ত্রণে আছে ১০টি দোকান। এছাড়া ‘কনজ্যুমার ইয়্যুথ’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরাও খাবারের মান, পরিবেশ ও মূল্য নির্ধারণে নিয়মিত কাজ করে থাকেন।

কনজ্যুমার ইয়্যুথ এর সভাপতি মতিউর রহমান মুন্না ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘খাবারের মান এবং দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সাথে নিয়ে কাজ করি। সেক্ষেত্রে দোকান মালিকদের যাতে ক্ষতি না হয় পাশাপাশি যারা ভোক্তা রয়েছে তাদের কাছ থেকেও যাতে করে চড়া মূল্য রেখে হয়রানি করা না হয় সেদিকটা খেয়াল করি।’