আমাদের পৃথিবীর ভেতর আরেক পৃথিবী গড়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বন্ধু-পরিজনকে একত্রিত করতে সোশ্যাল মিডিয়া অনন্য। নিজের মনের কথা, যেকোনো বিষয়ে মতামত, ছোট ছোট ভালোলাগা-মন্দলাগা সবই আমরা ভাগাভাগি করি এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনেক সময় সেখানে আমরা এমন অনেক বিষয় শেয়ার করে থাকি যা আসলে শেয়ার না করাই ভালো। কতটুকু বললে তা ব্যক্তিগত সীমানা অতিক্রম করে না, তা আমাদের জানা থাকা জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনোকিছু শেয়ার করার ক্ষেত্রেও তাই সচেতন থাকতে হবে।

ভালোবাসার মানুষটিকে ভালোবাসার কথা জানানোর নানা উপলক্ষ খুঁজে বেড়ানোই স্বাভাবিক। অনেকে নিজের প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা পোস্ট করে থাকেন। শেয়ার করে থাকেন অনেক না বলা কথা। কিন্তু সব সময় যে তা উভয়পক্ষের জন্য মধুর হয় তা কিন্তু নয়। কারণ অনেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনকিছু কাজ করে থাকেন যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়। যা হতে পারে অস্বস্তির কারণ। আপনার কিছু কাজ সঙ্গীকে মুগ্ধ করার বদলে বিরক্ত করে তুলতে পারে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ঘনিষ্ঠ ছবি পোস্ট করবেন না

সব সময় একটি বিষয় মাথায় রাখবেন আর তা হলো, আমাদের বাস্তব পৃথিবী আর সোশ্যাল মিডিয়া হুবহু এক নয়। এখানে মানুষ শুধু সেই বিষয়গুলোই পোস্ট করে যা তাকে নির্দোষ, নির্ভুল ও সুন্দর হিসেবে প্রকাশ করে। কিন্তু বাস্তবে কোনো মানুষই পরিপূর্ণ সুন্দর নয়। তাই বাস্তব জীবন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না। সবচেয়ে ভালো হয় নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে রাখতে পারলে। আপনাদের দু’জনের ঘনিষ্ঠ কোনো ছবি ভুলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করবেন না। এতে আপনার সঙ্গী বিব্রত হতে পারে। কিছু বিষয় শুধু দু’জনের ভেতর সীমাবদ্ধ রাখাই উত্তম। নিজেদের একান্ত বিষয়গুলো আর দশজনের সামনে তুলে ধরে ভালোবাসার সম্পর্কটি হালকা করে ফেলবেন না।

যখন তখন লাভ রিঅ্যাক্ট নয়

ছোট ছোট ইমোটিকন আমাদের মনের নানা কথা প্রকাশ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে ভালোলাগার কোনোকিছু দেখতে পেলে আমরা ‘হার্ট’ ইমোটিকন বা লাভ রিঅ্যাক্টের মাধ্যমে ভালোবাসা জানিয়ে থাকি। কিন্তু সঙ্গীর সব পোস্টেই যদি আপনি ‘হার্ট’ ইমোটিকন দিতে থাকেন তখন বিষয়টি দেখতে হাস্যকর লাগবে। আবার যখন-তখন ‘হার্ট’ ইমোটিকন দিতে থাকলে তা আপনার সঙ্গীর কাছে বিরক্তির কারণ হতে পারে। তাই ইমোটিকনের ব্যবহারও করতে হবে বুঝেশুনে। এমনকিছু করা যাবে না যা আপনার ব্যক্তিত্বকে ক্ষুণ্ন করে।

আদুরে নাম প্রকাশ করবেন না

ভালোবাসার মানুষটিকে আদর করে গুলুমুলু ডাকুন আর যা-ই ডাকুন না কেন, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করবেন না। প্রত্যেকেই তার ভালোবাসার মানুষটিকে পছন্দের নামে ডাকতে ভালোবাসে। কিন্তু সেই ডাক সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেবেন না। ভালোবাসার সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা জরুরি। তাই আপনাদের আদরের নাম বাইরে প্রকাশ করার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনাদের ব্যক্তিগত জীবন আর সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে একটি পর্দা রাখুন।

মন্তব্যের জন্য জোরাজুরি নয়

আপনি কোনো পোস্ট করলেই তাতে মন্তব্য করার জন্য সঙ্গীকে জোরাজুরি করবেন না। কারণ আপনার সব পোস্ট তার পছন্দ নাও হতে পারে। আর পছন্দ না হলেও জোর করে পছন্দ করানো কোনো ভালো কথা নয়। এতে করে সঙ্গী আপনার প্রতি বিরক্ত হতে পারে। যদি তার ইচ্ছে হয় তবে সে নিজে থেকেই মন্তব্য করবে। এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন যা ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করে।

প্রতি পোস্টেই মন্তব্য নয়

অনেকেই আছেন যারা সঙ্গী সবকিছুতে দখলদারিত্ব দেখাতে কিংবা নাক গলাতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটি মোটেই ঠিক নয়। সঙ্গীর সব পোস্টে কমেন্ট করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়া থেকে বিরত থাকুন। ভালোবাসার মানুষকে সার্বক্ষণিক চোখে চোখে রাখলে তাকে মোটেই ভালোবাসা বলে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কোনো কাজ করবেন না যা আপনাকে সন্দেহপ্রবণ হিসেবে প্রকাশ করে। বরং ভালোবাসার মানুষটিকে ভালো রাখার চেষ্টা করুন।

এইচএন/এএ