যে ৭ কারণে ভুঁড়ি বাড়ে
পেটের বাড়তি ভুঁড়ি শুধু আপনার চেহারারই ক্ষতি করে না, এটি স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। একবার ভুঁড়ি বাড়তে শুরু করলে তা কমানো মুশকিল হয়ে যায়। যারা পেটের মেদ ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করছেন, তারা এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে এটি এতটা সহজ নয়। ভুড়ি কমানোর জন্য প্রয়োজন পড়ে অনেক বেশি প্রচেষ্টার।
ভুঁড়ি কমানোর আগে জেনে নিতে হবে যে কেন আমাদের পেটের মেদ বাড়ে। আমাদের কোন কোন অভ্যাস ভুঁড়ি বৃদ্ধির প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। আমরা কীভাবে তা প্রতিরোধ করতে এবং কমাতে পারি।
বিজ্ঞাপন
ট্রান্স ফ্যাট অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর
ফ্যাট খাওয়া শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার জন্য কোন ফ্যাট সঠিক তা জানা। উদাহরণস্বরূপ, ট্রান্স ফ্যাট সবচেয়ে অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটগুলোর মধ্যে একটি, যা কেবল পেটের চর্বিই নয়, আপনার সামগ্রিক শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া, এটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যেমন কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং আরও অনেক কিছুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ট্রান্স ফ্যাট বেকারি এবং প্যাকেটজাত পণ্যে বেশি থাকে।
তাই ভুঁড়ি কমাতে হলে আপনাকে অবশ্যই এমন খাবার খাওয়া কমাতে হবে যাতে ট্রান্স ফ্যাট বেশি থাকে। এর বদলে খেতে হবে দানাদার শস্য জাতীয় খাবার। প্রচুর ফাইবার এবং শাকসবজি খেতে হবে। পুষ্টি এবং খনিজ সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে তালিকায়।
অ্যালকোহল ভুঁড়ি বাড়ায়
অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা ভুঁড়ি বাড়ানোর জন্য দায়ী হতে পারে। অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়গুলো শরীরে ক্যালোরি সরবরাহ করে, কিন্তু এতে কোনো পুষ্টি নেই। ফলে ভুঁড়ি ও ওজন দুটোই বাড়ে। আপনি যদি ভুঁড়ি কমাতে চান এবং অ্যালকোহলিক হন তবে আপনাকে অবশ্যই দ্রুত তা থামাতে হবে। একবারে না পারলে ধীরে ধীরে চেষ্টা করে বন্ধ করতে হবে। তৃষ্ণা মেটাতে অ্যালকোহলের বদলে পানি পানের অভ্যাস করুন। এটি আপনাকে সতেজ রাখবে, শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র রাখবে।
অলসতাও হতে পারে কারণ
আপনি যদি বেশিরভাগ সময় আরাম ও অলসতা পছন্দ করেন তবে ভুঁড়ি কমানো আপনার জন্য প্রায় অসম্ভব। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে তা আপনাকে নির্দিষ্ট ওজন ধরে রাখতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গে কমায় পেটের চর্বি। যদি শরীরচর্চা করার সময় না হয় তবে অন্তত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন। অলস বসে থাকার চেয়ে এটি বরং ভালো। বাড়িতে করা যায় এমন ছোটখাট শরীরচর্চাগুলো করতে পারেন। তবে একসঙ্গে সব শুরু করবেন না, শরীরকে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিন।
চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয়
আমাদের স্বাস্থ্য ও ওজনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে আমাদের খাদ্যাভ্যাস। আপনি যদি অতিরিক্ত চিনি খান, তাহলে আপনার ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। চিনিযুক্ত খাবার এবং পানীয়, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট পোড়ানো কঠিন, এগুলো চর্বি হিসাবে জমা হয়। চিনির খাওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আনার সর্বোত্তম উপায় হলো স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করা, পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া, প্রচুর পানি পান করুন যাতে পরিপূর্ণ এবং পরিতৃপ্ত বোধ করা যায়। কম ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন যা আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং দুর্দান্ত।
মানসিক চাপ এবং ঘুমের অভাব
গবেষণায় বলা হয়েছে যে স্ট্রেস এবং উদ্বেগ শরীরে কর্টিসল হরমোন তৈরি করতে পারে, যা বিপাককে ধীর করে দেয়। বিপাক কমে গেলে ওজন বা ভুঁড়ি কমার সম্ভাবনা মারাত্মকভাবে কমে যায়। ঘুম কম হলে তা আপনার কর্টিসলকে স্পাইক করতে পারে এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারের জন্য আপনার আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে পারে, যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে পেটের চর্বি বৃদ্ধি পায়। তাই আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। সেইসঙ্গে জরুরি পর্যাপ্ত ঘুম। প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।
কম ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে
ভুঁড়ি দূর করতে চাইলে নিয়মিত ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। কম ফাইবার ও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার ক্ষুধা নিবারণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে, এর ফলে আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেয়ে ফেলেন। এছাড়াও শরীরে পর্যাপ্ত ফাইবার না থাকলে, আপনার পাচনতন্ত্রে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চ আঁশযুক্ত খাদ্যের মধ্যে রয়েছে আস্ত শস্য, বাদাম, ওটস, সবুজ শাকসবজি, মটরশুটি, মসুর ডাল এবং হাইড্রেটিং ফল। এই খাবারগুলো আপনাকে দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখবে। এর ফলে অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কম হবে।
জিনগত কারণ হতে পারে
আপনি দেখতে কেমন, আপনার শারীরিক অসুস্থতার ধরন এবং আরও অনেক কিছু সংজ্ঞায়িত করতে পারে আপনার জিন। এছাড়াও আপনার ভুঁড়ির কারণ হিসেবেও কাজ করতে পারে আপনার জিন। গবেষণা পরামর্শ দেয় যে নির্দিষ্ট কিছু জিন লেপটিনের ক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। লেপটিন হলো এমন একটি হরমোন যা ওজন এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদিও আপনার ওজন ও ভুঁড়ি বৃদ্ধির জন্য আপনার জিন কতটা দায়ী তা নিশ্চিত করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।