মুখে বয়সের ছাপ দূর করবেন যেভাবে
মুখে বয়সের ছাপ পড়লে তা নিয়ে একটু তো মন খারাপ হয়ই। কিন্তু সময়কে আর কে আটকে রাখতে পারে বলুন! বয়স বাড়বেই, সেইসঙ্গে তার ছাপও পড়বে চেহারায়। এটিই স্বাভাবিক নিয়ম। সময়কে আটকানো না গেলেও মুখে বয়সের ছাপ পড়ার প্রক্রিয়া কিন্তু ধীর করে আনা যায়। অর্থাৎ আপনি যত্নশীল হলে বয়স বাড়লেও তার ছাপ পড়বে না চেহারায়। বা এতটাই কম পড়বে যে তা চোখে পড়বে না।
অনেকের ক্ষেত্রে অল্প বয়সেই মুখে বলিরেখার সমস্যা দেখা দেয়। মুখের যেকোনো সমস্যাই অস্বস্তিদায়ক এবং সেগুলো সারিয়ে তোলা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। বলিরেখাও এর ব্যতিক্রম নয়। বয়স বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অনেকের ঠোঁটের নিচে, চোখের পাশে, কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করে। আয়না নিজেকে দেখে চমকে যেতে হয়। নিজেকে তরুণ কে না দেখতে চায়!
বিজ্ঞাপন
তারুণ্য কিন্তু নিজের ভেতরে বসবাস করে। তাই এটি ধরে রাখুন। আপনি যদি মোটামুটি নিশ্চিন্ত এবং হাসিখুশি জীবনযাপন করতে পারেন তবে বয়সের ছাপ সহজে পড়বে না মুখে। সেইসঙ্গে নিয়মিত ত্বকের যত্ন নেওয়াও প্রয়োজন। সেজন্য যে নামীদামী পার্লারে ছুটতে হবে এমন কোনো কথা নেই। বরং ঘরে বসে খুব সহজ উপায়েই বলিরেখার আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারবেন।
বলিরেখা আসলে কী?
আমাদের মুখের ত্বক কিন্তু শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের মতো নয়। অর্থাৎ মুখের ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল। আমাদের বয়স বাড়তে থাকলে কোষ বিভাজনের গতি কমতে থাকে। কোলাজেন নামক একটি বিশেষ প্রোটিন আমাদের ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে। বয়স বৃদ্ধির কারণে সেই কোলাজেন ক্ষয় হতে থাকে। ফলে ত্বক পাতলা ও ভঙ্গুর হয়ে যায়। ত্বকের স্বাভাবিক নমনীয়তা নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে গাল, মুখ, গলা ও ঘাড়ের চামড়া ঝুলে যেতে থাকে। এর ফলে বলিরেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
বলিরেখা হওয়ার কারণ
বলিরেখা বয়স বৃদ্ধির কারণে হয়ে থাকে। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়লে ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। কারণ বলিরেখার কারণে ত্বক কুচকে যায়। তবে আধুনিক জীবনযাপনের এই সময়ে অনেকের ক্ষেত্রে কম বয়সেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় ২৫ বছরের কাউকে দেখে ৩৫ বছরের মনে হতে পারে। বলিরেখার অন্যান্য কারণ হতে পারে-
* দূষণ
* একটানা রোদে থাকা
* ভিটামিন ডি৩-এর অভাব
* অতিরিক্ত কসমেটিক্সের ব্যবহার
* ঘন ঘন মুখের ক্রিম ও কসমেটিক্স বদলানো
* ধূমপান।
বলিরেখার লক্ষণ
* চোখ, মুখ এবং ঘাড়ের চারপাশে অতিসূক্ষ্ম রেখা
* চোখ ও ঠোঁটের চারপাশে গভীর বলিরেখা
* মুখ এবং ঘাড়ের ত্বকসহ ত্বকের বিভিন্ন অংশ ঝুলে পড়ে
* মুখের সঙ্গেসঙ্গে হাতের ত্বকও কুচকে যায়।
বলিরেখা দূর করবেন যেভাবে
বলিরেখার দূর করার জন্য রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ তাতে সাময়িক মুক্তি মিললেও দেখা দিতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। তাই এক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন ঘরোয়া উপাদান। এগুলো উপকারী হওয়ার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু ঘরোয়া সমাধান-
ডিমের সাদা অংশের ব্যবহার
একটি ডিমের সাদা অংশ নিন। এরপর তা ভালো করে ফেটিয়ে এবং ত্বকের উপর লাগিয়ে নিন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি অ্যান্টি রিঙ্কলস ক্রিমের বদলে ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুইবার এভাবে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন। খুব সহজ এই ঘরোয়া উপায় ত্বকের বলিরেখা এবং ফাইনলাইনস দূর করতে সাহায্য করে। এটি ত্বকে বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না সহজে।
অ্যালোভেরা ব্যবহার
এক চামচ অ্যালোভেরা জেল ও একটি ডিমের সাদা অংশ নিন। উপকরণ দুটি একসঙ্গে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। এটি ভালোভাবে মুখে ম্যাসাজ করে নিন। এভাবে রেখে দিন আধা ঘণ্টার মতো। এরপর পরিষ্কার পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অ্যালোভেরায় থাকা ভিটামিন সি ত্বকের সতেজভাব ফিরিয়ে আনে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান বলিরেখা দূর করে, ত্বককে করে দাগছোপ মুক্ত। সপ্তাহে দুইদিন এভাবে ব্যবহার করুন।
পেঁপে ও কলার ব্যবহার
কয়েক টুকরো পাকা পেঁপে ও অর্ধেক পাকা কলা নিন। দুটি ফল একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ত্বকে ব্যবহার করুন। এভাবে অন্তত পনের মিনিট রেখে দিন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। পেঁপেতে থাকে প্যাপাইন নামক এনজাইম, কলায় আছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। এসব উপাদান ত্বকে প্রাণ ফেরাতে কাজ করে। সপ্তাহে দুই-তিনবার এটি ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।