করোনা থেকে সেরে ওঠার পর এই সমস্যাগুলোতে ভুগছেন না তো?
আমরা সবাই এখন জেনে গেছি, করোনাভাইরাস একটি অত্যন্ত সংক্রামক রোগের কারণ। এর উপসর্গগুলোই কেবল বৈচিত্রপূর্ণ এবং বিপজ্জনক নয়, দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোও উদ্বেগজনক। যদিও কিছু ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত রোগী উপসর্গবিহীন থাকে বা হালকা থেকে মাঝারি ধরনের অসুস্থতার সম্মুখীন হয়, তবে এমন ব্যক্তি আছেন যারা প্রচুর ভোগেন এবং লং কোভিড জটিলতার ঝুঁকিতে পড়েন।
করোনাভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে
বিজ্ঞাপন
করোনাভাইরাসের গতিবিধি বা এর কারণে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা মুশকিল। এটি শুধু সংক্রমণের ধরন এবং হারের ক্ষেত্রেই নয়, এর লক্ষণ এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের ক্ষেত্রেও সত্যি। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এমন অনেকেই আছেন যাদের করোনা নেগেটিভ হওয়ার পরও অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এর ২০২০ সালের জরিপ অনুযায়ী, মানুষ করোনাভাইরাসের উপসর্গগুলো থেকে সেরে উঠতে এবং তাদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে ফিরে আসতে কয়েক সপ্তাহ সময় নিতে পারে।
কোভিড সিম্পটম স্টাডি অ্যাপের তথ্য থেকে জানা যায় যে, কোভিড আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের মধ্যে ১ জন ৩ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে লক্ষণ অনুভব করে।
২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চীনের উহানের একটি হাসপাতালে তিন-চতুর্থাংশের বেশি করোনাভাইরাস রোগী এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড় পাওয়ার ৬ মাস পরেও অন্তত একটি উপসর্গ অনুভব করেছেন।
দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণগুলোর সময়কাল ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে, করোনাভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খুব বেশি ক্ষেত্রে ঘটছে এবং বিশেষজ্ঞরা এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বেড়ে যায়
করোনা থেকে সেরে ওঠার পর কিছু রোগীর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিতে পারে। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের পেছনে এই রক্ত জমাট বাধা প্রধান কারণ, করোনার কারণে হার্টের ক্ষতি হয়। খুব ছোট জমাট বাঁধার কারণে তা হার্টের পেশীতে ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলোকে ব্লক করে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, লং কোভিড জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। যা শ্বাসকষ্ট, ক্লান্তি এবং ব্যায়ামের ক্ষমতা হ্রাসের কারণ হতে পারে।
এর আগে, জার্নাল অফ থ্রম্বোসিস অ্যান্ড হেমোস্টেসিসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লং কোভিড সিনড্রোম রোগীদের রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে
করোনা সেরে যাওয়ার পর অনেকের ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হৃদরোগ দেখা দিয়েছে। এর পাশাপাশি মাথা ঘোরা, বুকে ব্যথা, হৃদস্পন্দন এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলো করোনা পরবর্তী সঙ্গী হচ্ছে। এক্ষেত্রে শুধু বয়স্করাই নন, ঝুঁকিতে রয়েছেন তরুণেরাও।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা করোনা থেকে সেরে ওঠার পরেও বুকে ব্যথা অনুভব করেছেন বা যারা ইতিমধ্যে হৃদরোগে ভুগছেন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের হৃদরোগের অবস্থা জানতে কার্ডিয়াক টেস্ট করা উচিত।
ডিপ্রেশন বাড়িয়ে দিতে পারে
শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি করোনাভাইরাস আমাদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করছে। করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে যাওয়ার পর মানুষের মধ্যে আরও বেশি উদ্বেগ এবং চাপ বেড়েছে। এটি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই নয়, শিশুদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনার শুরু থেকে মানুষ চিন্তিত ছিল এবং লকডাউনের কারণে তারা কোথাও যেতে পারছিল না যা স্থূলতা, চাপ এবং হতাশার কারণ। এটি হার্টের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। করোনা পরবর্তী ডিপ্রেশন থেকে বের হতে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা কী বলেন?
করোনা পরবর্তী রোগীদের হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এ ধরনের রোগীদের দুই মাস পরে নিয়মিত হার্ট স্ক্রিনিং, ব্যায়াম বা কমপক্ষে আধা ঘণ্টা যোগব্যায়াম করা উচিত। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর ডায়েট মেনে চলা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
লং কোভিড সামলে চলার উপায়
করোনা থেকে সেরে ওঠার পর নিজের যত্ন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই সুস্থ হওয়ার পর যত্ন নেওয়ার কথা ভুলে যান। কিন্তু এটি একদমই ঠিক নয়। করোনাসহ যেকোনো গুরুতর সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর যত্ন নেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি।
নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে যান এবং হার্ট নিয়মিত পরীক্ষা করান, বিশেষ করে যদি আপনার আগে থেকেই কার্ডিওভাসকুলার অসুস্থতা থাকে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার এবং হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরচর্চা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শুরুতেই ভারী শরীরচর্চার দিকে ঝুঁকবেন না। প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য হাঁটুন। আপনার যদি কোনো দীর্ঘস্থায়ী লক্ষণ থাকে যেমন বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদি তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসা নিতে হবে।
টাইস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে