ঘরের খাবারে কিশোয়ারের বিশ্বজয়
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ১৩তম আসরে দর্শক মাতাচ্ছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিশোয়ার চৌধুরী। আন্তর্জাতিক এ প্রতিযোগিতায় শীর্ষ চারে জায়গা করে নিলেও এখন আছেন গ্র্যান্ড রাউন্ডে। রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই লড়াইয়ের চূড়ান্ত ধাপ। এরআগে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ঢাকা পোস্ট : রান্নার প্রতি ভালোলাগা শুরু হলো কবে থেকে?
বিজ্ঞাপন
কিশোয়ার চৌধুরী : ছোটবেলায় থেকেই রান্না ঘরে ছুটাছুটি করতাম মায়ের সঙ্গে। মা যা রান্না করতেন সব কিছু মনোযোগ দিয়ে দেখার চেষ্টা করতাম। রান্না ঘরের সেই মনোযোগটা এখনো ধরে রেখেছি।
ঢাকা পোস্ট : রান্নাঘরে কোন বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
কিশোয়ার চৌধুরী : আমার কাছে রান্না করার সময় ব্যালেন্স রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়। বিশেষ করে কোন খাবারের সঙ্গে কোন খাবারের কম্বিনেশন ভালো হবে, সে সম্পর্কে ধারণা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটি বিষয় একটু এদিক সেদিক হলেই রান্না তার স্বকীয়তা হারায়।
ঢাকা পোস্ট: মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় এসে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে?
কিশোয়ার চৌধুরী : সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এতো বড় একটি প্ল্যাটফর্মে নিজেকে তুলে ধরা। অবশ্যই যাত্রাটা আমার জন্য সহজ ছিলো না। নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমি পেরেছি। সঙ্গে ভিন্ন রকমের এক্সপেরিয়েন্স তো থাকছেই। এখানে এসে আমাকে এমন সব কর্মযজ্ঞ করতে হয়েছে, যা আগে কখনও করা হয়নি।
ঢাকা পোস্ট: এ প্রতিযোগিতায় এসে সারা জীবন মনে রাখার মত কোনো ঘটনা ঘটেছে?
কিশোয়ার চৌধুরী : মনের রাখার মত ঘটনা বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে আমরা অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রবিন্দু উলুরুতে অবস্থান করছি। এখানকার সংস্কৃতি, পুরাতন ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পেয়েছি। এখানকার মানুষগুলোও বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। এখানে এসে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এসব ঘটনা সারাজীবন মনে থাকবে।
ঢাকা পোস্ট: বাবা মায়ের সঙ্গে রান্না নিয়ে মজার কোনো স্মৃতি শুনতে চাই..
কিশোয়ার চৌধুরী : মজার ঘটনাও অনেক আছে। ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাসায় রান্নার কাজে সবাই সহযোগিতা করতো। আগেই বলেই সেখান থেকেই আমি রান্না শিখেছি। মাঝে মধ্যে এমনও হয়েছে, মা থাকতো মূল রান্নার দায়িত্বে, আমার ও বাবার দায়িত্ব ছিল সবজী কাটাকুটি। এসব নিয়েই চলত নানা ধরনের খুনসুটি।
ঢাকা পোস্ট : আপনি বাংলায় খুব সুন্দর কথা বলতে পারেন। অস্ট্রেলিয়া জন্ম ও বেড়ে ওঠার পরও বাংলা চর্চা কিভাবে হয়েছিল?
কিশোয়ার চৌধুরী : আমার বাবা বাংলাদেশী আর মা ভারতীয় নাগরিক, তবে তাঁরা দুজনই অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় বাংলা বলেন। আমার পরিবার বেশ বড় হওয়ায় নানা-নানীসহ পরিবারের সবার সঙ্গে বাংলায় কথা বলা হতো। এছাড়াও এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন কমিউনিটি ও বাংলা স্কুল আছে। ফলে আমার বাংলা চর্চাটা ছিলই।
ঢাকা পোস্ট : আপনি একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশের কোন খাবারটি আপনার পছন্দ?
কিশোয়ার চৌধুরী : ব্যক্তিগত ভাবে বাংলাদেশের কয়েকটি খাবার আমার বেশ পছন্দ। এরমধ্যে ইলিশ পাতুরি অন্যতম। এছাড়াও জাম, জামরুল, পানিফল, কাঁচা আমের ভর্তা, ফুচকা-চটপটি আমার অনেক পছন্দ।
ঢাকা পোস্ট : বাংলাদেশে আপনার অসংখ্য ভক্ত, অনুসারী তৈরি হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
কিশোয়ার চৌধুরী: সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। চাইবো আমার প্রতি এই ভালোবাসা সবসময় থাকুক। আমি ছোট একটি স্বপ্ন নিয়ে এখানে এসেছিলাম। পরিবারের জন্য যা রান্না করি, সেগুলোই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। জেনে ভালো লাগছে, সবাই সেটা পছন্দ করছেন। আমার মাস্টারশেফ আসার পেছনে অনেক মানুষ জড়িত। তাদের অনুপ্রেরণা ও ভালোবাসা ছাড়া এতো দূর আসা সম্ভব হতো না।
আরআর