গ্রীষ্মের যে ফলগুলোর জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি, তার মধ্যে অন্যতম হলো লিচু। চোখজুড়ানো রং আর প্রাণজুড়ানো স্বাদের কারণে লিচুর স্থান সবার পছন্দের তালিকায়। লিচুর মৌসুম খুব বেশিদিন থাকে না। উঠতে না উঠতেই ফুরিয়ে যায় যেন। তবু রসালো আর মিষ্টি এই ফলের জন্য সারা বছরের অপেক্ষা। শুধুই কি স্বাদ? স্বাদের পাশাপাশি এটি পুষ্টিগুণেও অনন্য। লিচুর রয়েছে অসংখ্য উপকারিতা। তবে উপকারী এই ফল একসঙ্গে খুব বেশি না খাওয়াই ভালো।

লিচুর উপকারিতা

প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে ৩১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনের একটি হলো ভিটামিন সি। এটি হাড়, দাঁত ও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এই ভিটামিন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যে কারণে ত্বক থাকে সতেজ, চেহারায় সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিস সি প্রয়োজন। 

মিষ্টি এই ফলে আছে সামান্য প্রোটিন ও ফ্যাট। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে আছে ১.১ গ্রাম প্রোটিন এবং ০.২ গ্রাম ফ্যাট, ০.০২ গ্রাম ভিটামিন বি ১ এবং ০.০৬ গ্রাম বি ২, ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.৭ মিলিগ্রাম লৌহ। এসব উপাদান আমাদের শরীরের গঠন ও সুস্থতার জন্য জরুরি। 

লিচুতে আছে অলিগোনল নামক উপাদান, যা অ্যান্টি-ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। উপকারী এই উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। এটি আমাদের ত্বককে ক্ষতিকর অতি বেগুনি আলোক রশ্মির প্রভাব থেকে দূরে রাখে, পাশাপাশি ওজন কমাতেও কার্যকরী

লিচুতে থাকা পটাশিয়াম শরীরে রক্ত ও নালীর চাপ কমিয়ে রক্তের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখে। লিচু খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়। এতে থাকা ফাইবার হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে। লিচু খেলে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায় কারণ এতে আছে ন্যাচারাল সুগার। 

থিয়ামিন ও নিয়াসিন নামক উপাদান রয়েছে উপকারী ফল লিচুতে। এসব উপাদান শরীরের বিপাক ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে। এই ফলে আছে ফ্ল্যাভানয়েডস, যা স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

লিচুর ব্যতিক্রমী স্বাদ

অনেকেই মিষ্টি খাবার খেতে পছন্দ করেন। তাই প্রাকৃতিক ডেজার্ট হিসেবে খেতে পারেন লিচু। লিচু দিয়ে তৈরি করতে পারেন ব্যতিক্রমী পদ। লিচুর শরবত, লিচুর পায়েসও বেশ সুস্বাদু। এই গরমে এসব খাবার আপনাকে সতেজ থাকতে সাহায্য করবে। লিচুর মিষ্টি স্বাদের জন্য এতে আলাদা করে চিনি যোগ না করলেও সমস্যা নেই। জেনে নিন লিচু দিয়ে ব্যতিক্রমী স্বাদের খাবার তৈরির পদ্ধতি-

লিচুর পায়েস

১০-১২টি লিচু খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে নিতে হবে। একটি পাত্রে এক লিটার দুধ জ্বাল দিন। দুধ নাড়তে থাকুন। ঘন হয়ে এলে তাতে সামান্য এলাচের গুঁড়া ও স্বাদমতো চিনি দিয়ে দিন। দুধের পরিমাণ অর্ধেক হয়ে এলে নামিয়ে নিতে হবে। দুধ কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর তাতে লিচু কুচি করে মিশিয়ে দিন। দুধ গরম অবস্থায় দিলে তা কেটে যেতে পারে। এরপর ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন।

লিচুর শরবত

৮-১০টি লিচু নিয়ে খোসা ও বীজ ছাড়িয়ে নিন। এবার লিচুর সঙ্গে এককাপ পানি, এক চা চামচ চিনি ও সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিন। এবার ব্লেন্ডারে সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। এই শরবত ছেঁকে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। ছেঁকে খেলে উপকার কম পাবেন। পরিবেশনের সময় বরফ মেশাতে পারেন বা ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে খেতে পারেন।

লিচু বেশি খেলে কী হয়?

একসঙ্গে অনেকগুলো লিচু খেলে তা রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে দিতে পারে। তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হোন। কারণ ডায়াবেটিসের রোগীদের ওষুধ শরীরে গ্লুকোজ এমনিতেই কমিয়ে রাখে। এই অবস্থায় লিচু খেলে তা গ্লুকোজের পরিমাণ আরও কমিয়ে দেয়। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, শিশুকে কখনোই খালি পেটে লিচু খাওয়াবেন না। 

লিচু খেলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত লিচু খেলে তা রক্তচাপের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, বমি, মাথা ঘোরানোর মতো সমস্যা। তাই লিচু খাওয়ার ক্ষেত্রে সংযমী হোন। 

প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে থাকে ৬৬ ক্যালোরি। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত লিচু খান তবে শরীরে জমা ক্যালরির পরিমাণও বেড়ে যায়। সেই ক্যালরি না ঝরাতে পারলে তা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে একসঙ্গে খুব বেশি লিচু খাবেন না। 

এইচএন/এএ