করোনার পরে চুল পড়ে যাচ্ছে? জেনে নিন করণীয়
চুল পড়ার সমস্যা এমনিতেই বেশ পরিচিত। কারণ বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। নানা রকম উপাদান ব্যবহার করেও মেলে না সঠিক সমাধান। চুল একবার পড়তে শুরু করলে থামতে ভুলে যায় যেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা নামক মহামারির প্রভাব। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর সেরে উঠলেও চুল পড়া নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন অনেকে। ফেসবুকের সারভাইভার কর্প গ্রুপ ও ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের ডাক্তার নাটালিয়ে ল্যাম্ববার্টের করা এক জরিপে দেখা গেছে, করোনা সেরে যাওয়ার পরে যেসব সমস্যা বেশি দেখা যায় তার মধ্যে একটি হলো চুল পড়া।
বিজ্ঞাপন
চুল পড়ার মূল কারণ কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশেই বেড়েছে। বিভিন্ন দেশে এই বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে। এর জন্য করোনাভাইরাস নয় বরং এর মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে স্ট্রেস। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ তো রয়েছেই, সেইসঙ্গে আক্রান্ত না হলেও আছে সংক্রমণের ভয়। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বাড়ছে মানসিক চাপ। এছাড়াও চুল পড়ার কারণ হিসেবে থাকতে পারে-
* অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা।
* কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট বেশি ব্যবহার করা।
* অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।
* ধুমপান ও মদ্যপান।
* মাইগ্রেন।
* ধুলোবালি ও দূষণ।
* পানির ধরন।
* হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
চুল পড়ার জন্য করোনাভাইরাস কতটা দায়ী?
করোনায় আক্রান্ত হলে বেশিরভাগের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে ঠিকই তবে তা শুরুতে নয়। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার দুই-আড়াই মাস পর এ ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চুল পড়ার এই সমস্যা কিন্তু শুধু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে নয়, বরং আরও অনেক অসুখের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে। যেমন টাইফয়েড, ডেঙ্গু, গর্ভধারণের পর চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো স্ট্রেস। যে কারণে নতুন চুল গজানো এবং বৃদ্ধি দুটিই বন্ধ হয়ে যায়। তার ফলস্বরূপ আক্রান্ত হওয়ার দুই-তিন মাস পর চুল পড়ে যেতে শুরু করে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের দিকেই সবার মনোযোগ, যে কারণে বেশিরভাগ শারীরিক সমস্যার জন্য করোনাভাইরাসকে দায়ী করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ ও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তাই কোনটি করোনাভাইরাসের জন্য আর কোনটি নয় তা বোঝা মুশকিল। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ভিটামিন ও প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে তা চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে। শরীরের ধরন বুঝে খাবার খেলে চুল পড়ার সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।
টেলোজেন এফ্লুভিয়াম নয় তো?
অসুস্থ হলে সবার ক্ষেত্রেই হেয়ার ফল স্টেজ আসে। এই স্টেজকে বলা হয় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম। শরীরের কোনো সমস্যা দেখা দিলে, হজমের সমস্যা হলে কিংবা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে এটি দেখা দেয়। গর্ভধারণ, অনিয়মিত পিরিয়ড, জ্বর, দুশ্চিন্তা, স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণ এটি হতে পারে। এসব কারণে চুল পড়ে গেলে তাকে বলা হয় টেলোজেন এফ্লুভিয়াম। এর আলাদা কোনো চিকিত্সা নেই। তিন-ছয় মাস পর চুলের নতুন করে বৃদ্ধি এমনিতেই শুরু হয়ে যায়।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরে উঠেছেন এমন অনেকের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মাথার দুই পাশের চুল পড়ে যাচ্ছে। তবে এটি করোনাভাইরাসের কারণে হচ্ছে কি না সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত করে কিছু জানাননি বিশেষজ্ঞরা। তাই চুল পড়া বন্ধ করতে চাইলে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকতে হবে। সেইসঙ্গে বাদ দিতে হবে দুশ্চিন্তা করার অভ্যাসও। করোনা সেরে গেলেও শরীর অনেকটাই দুর্বল থাকে। তাই প্রচুর পানি পান করুন, বিশ্রাম নিন এবং সঠিক খাবার খান। এরপরও চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে থাকলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
এইচএন/এএ