অতিরিক্ত কাজ করা একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা যা শারীরিক এবং মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলিতে অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যু এতটাই প্রচলিত যে এর জন্য নির্দিষ্ট পদ রয়েছে। আপনি যদি অতিরিক্ত কাজ করেন তবে শরীরে কী ঘটতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক-

অতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যা

গবেষণায় ধারাবাহিকভাবে দেখানো হয়েছে যে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা অনেক শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে জড়িত। ১০০৬ সালে ব্রিটিশ বেসামরিক কর্মচারীদের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় কাজের চাপ এবং বিপাকীয় সিন্ড্রোমের মধ্যে একটি সংযোগ পাওয়া যায়, যা ডায়াবেটিস, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০১৫ সালে আরও গবেষণা দীর্ঘ কর্মঘণ্টাকে স্ট্রোক এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো প্রতিকূল স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে যুক্ত করেছে, বিশেষত নিম্ন আর্থ-সামাজিক অবস্থার গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের মধ্যে।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষণায় দেখা যায়, যারা প্রতি সপ্তাহে ৫৫ বা তার বেশি ঘণ্টা কাজ করেছে তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ১৩% বেশি এবং যারা প্রতি সপ্তাহে ৩৫-৪০ ঘণ্টা কাজ করেছে তাদের তুলনায় স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩৩% বেশি।

মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব

অতিরিক্ত কাজ করার ফলে মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাবও সমানভাবে উদ্বেগজনক। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, শারীরিক অতিরিক্ত পরিশ্রম কর্মক্ষেত্রে অসুস্থতার একটি প্রধান কারণ। অতিরিক্ত কাজ করার অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। যে কারণে বাড়ে হতাশা এবং উদ্বেগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখন বিশ্বব্যাপী অক্ষমতার প্রধান কারণ হিসাবে বিষণ্ণতাকে দায়ী করে। এর উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রভাবও রয়েছে।

অতিরিক্ত কাজ থেকে উদ্ভূত সাধারণ সমস্যা

অতিরিক্ত কাজ করার অভ্যাস অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে যে ব্যথানাশক ওষুধের বর্ধিত ব্যবহার, ফাস্ট ফুডের বেশি ব্যবহার, কম ব্যায়াম এবং উচ্চ অ্যালকোহল সেবনের নেপথ্যে এ ধরনের অভ্যাস ছিল। অতিরিক্ত পরিশ্রমী ব্যক্তিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সঠিক পুষ্টি এবং হাইড্রেশনকে অবহেলা করে, যা সম্ভাব্যভাবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং ডিহাইড্রেশনের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার দিকে নিয়ে যায়।

অতিরিক্ত কাজ করার কারণে দীর্ঘস্থায়ী চাপ ঘুমের গুণমান এবং পরিমাণকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, যা ফলস্বরূপ সামগ্রিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। ঘুমের ঘাটতি হলে তা ইমিউন ফাংশনকে প্রভাবিত করে, রোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং নেতিবাচকভাবে মেজাজ, ক্ষুধা এবং মস্তিষ্কের ফাংশনকে প্রভাবিত করে। ধীরে ধীরে এই সমস্যাগুলো বার্নআউটসহ গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

এইচএন