অভিভাবকদের যে কাজ শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করতে পারে
সন্তানদের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে তাদের ভালো-খারাপ বিষয়গুলো নিয়ে অভিভাবকদের চিন্তার শেষ নেই। প্রতিটি বিষয় বোঝানো সব বাবা-মায়ের জন্যই কঠিন কাজ।
অনেক সময় শিশুরা জেনে বা না জেনে অনেক ভুল পদক্ষেপ নেয়। এর ফলে অভিভাবকের টেনশন বেড়ে যায়। এ জন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের প্রতি ২৪ ঘণ্টা কড়া নজর রাখেন। অভিভাবকরা মনে করেন, এটা করা ভালো কাজ, কিন্তু এর ফলে শিশুদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা।
বিজ্ঞাপন
শিশুদের অত্যধিক নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করার অভ্যাসকে বিশেষজ্ঞরা হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং বলেছেন। যে বাবা-মায়েরা সবসময় তাদের সন্তানের প্রতিটি কার্যকলাপের ওপর নজর রাখেন এবং তার চারপাশে ঘোরাঘুরি করেন।
অভিভাবকরা মনে করেন, সবসময় তাদের সন্তানদের প্রতি নজর রাখা ভালো, তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষণার মতে, অভিভাবকত্বের এই পদ্ধতি শিশুদের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
শিশুদের জীবনে অত্যধিক হস্তক্ষেপ ও তাদের প্রতিটি কার্যকলাপ এবং কথোপকথনের উপর নজর রাখা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বলে মনে করা হয় না। এ কারণে শিশুরা দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে না এবং অনেক সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং শিশুদের বিকাশ এবং বৃদ্ধি প্রভাবিত করে। এর কারণে, শিশু নিজেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে অক্ষম বোধ করবে এবং অস্বস্তি বোধ করবে। শিশুরা প্রায়শই ভুল করে কিন্তু অভিভাবকত্বের এই পদ্ধতিতে, শিশুরা ভুল করে নিজেরাই পাঠ শিখতে সক্ষম হয় না। তাদের ভুল করার সুযোগ দেওয়া হয় না।
এছাড়া শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে তাদের বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। শিশুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেরাই সমস্যা সমাধানের শিল্প শিখে, কিন্তু অতিরিক্ত অভিভাবকত্ব তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি শিখতে বাধা দিতে পারে। এই ধরনের শিশুরা তাদের বাবা-মাকে খোলাখুলি কিছু বলতে পারে না এবং ভেতরে শ্বাসরোধ করে থাকে। এতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং শুধুমাত্র শিশুদের জন্যই নয়, পিতামাতার জন্যও ক্ষতিকর। ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন এর গবেষণায় দেখায়, হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং শিশুদের মধ্যে চাপ, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে। এই অভিভাবকত্ব শিশুদের মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এটি শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এখন পর্যন্ত অনেক গবেষণায় এই প্যারেন্টিংয়ের অসুবিধাগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এই অভিভাবকত্ব কিছু শিশুদের জন্য উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। তবে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে যে তাদের অভিভাবকত্ব শিশুর বিকাশকে যেন প্রভাবিত না করে।
এমএসএ