মানুষের মনের অলিগলি আমরা আর কতটা জানি? শরীরে যেমন অসুখ হয়, তেমন অসুখ বাঁধতে পারে মনেও। এই অসুখ চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এগুলোরও চিকিৎসা জরুরি। কিছু মানসিক অসুস্থতা আবার ঋতুভিত্তিক হয়ে থাকে। যেমন সিজনাল এফেক্টিভ ডিসঅর্ডার বা এসএডি হলো একধরনের ঋতুকালীন বিষন্নতার ব্যাধি। এটি বছরের নির্দিষ্ট ঋতুতে ঘটে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শরৎ বা শীতে হয় আবার ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষণগুলো ভালোর দিক যেতে থাকে।

কারা বেশি এই রোগে আক্রন্ত হন?

এসএডি সাধারণত যৌবনের সময় শুরু হয়। এর ঝুঁকি বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। এটি ২০ বছরের কম বয়সী লোকেদের মধ্যে বিরল। পুরুষদের তুলনায় মহিলারা বেশি আক্রান্ত হন।

এসএডি এর কারণ?

এসএডি এর কারণ হিসেবে মনে করা হয় সাধারণত কম সূর্যালোক এবং ছোট দিন মস্তিষ্কে রাসায়নিক পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও আমাদের শরীরে মেলাটোনিন নামে ঘুম-সম্পর্কিত হরমোন রয়েছে, অন্ধকার হলে শরীর স্বাভাবিকভাবেই বেশি মেলাটোনিন তৈরি করে। সুতরাং, যখন দিন ছোট এবং অন্ধকার হয়, তখন আরও মেলাটোনিন তৈরি হয় এবং মানুষকে বিষণ্ণ করে তোলে।

এসএডি এর ধরন

১. শীতকালীন বিষণ্ণতা : এসময়ে বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো শরতের শেষের দিক থেকে শীতের শুরুতে শুরু হয় এবং গ্রীষ্মের মাসগুলোতে সহজ হয়।

২. গ্রীষ্মকালীন বিষণ্ণতা: এসময়ে লক্ষণগুলো বসন্তের শেষের দিক থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে দেখা দেয়। এটি অবশ্য কম দেখা যায়।

এসএডি এর লক্ষণ

* ঘুম এবং দিনের বেলা তন্দ্রাভাব বৃদ্ধি।

* পূর্বে উপভোগ করা কাজগুলোতে আগ্রহ এবং আনন্দ একদম কমে যাওয়া।

* সামাজিক কার্যক্রম প্রত্যাহার এবং প্রত্যাখ্যান।

* বিরক্তি এবং উদ্বেগ।

* অপরাধবোধ এবং আশাহীনতার অনুভূতি।

* ক্লান্তি বা দুর্বলতা।

* সেক্স ড্রাইভ কমে যাওয়া।

* ফোকাস বা মনোনিবেশ করার ক্ষমতা হ্রাস।

* পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে সমস্যা।

* ক্ষুধা বৃদ্ধি, বিশেষ করে মিষ্টি এবং কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।

* ওজন বৃদ্ধি।

* শারীরিক সমস্যা, যেমন মাথাব্যথা

এই উপসর্গগুলো নির্দিষ্ট সময়ে ফিরে আসে এবং তারপর প্রতি বছর প্রায় একই সময়ে দেখা দেয়।

এসএডি থেকে মুক্তির প্রাথমিক উপায়

বিষণ্ণতা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরতে পারলে এটি ম্যানেজ করা সহজ হয়ে যায়। শীতকালীন বিষণ্ণতা এবং গ্রীষ্মকালীন বিষণ্ণতারর চিকিৎসা ভিন্ন হয় এবং নিম্নলিখিত উপায়গুলোর মধ্যে যেকোনো একটি বা সংমিশ্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে-

* সূর্যালোকের এক্সপোজার : জানালার বাইরে বা কাছাকাছি সময় কাটালে উপসর্গ উপশম হতে পারে।

* লাইট থেরাপি: যদি সূর্যালোক বাড়ানো সম্ভব না হয় তবে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একটি বিশেষ আলোর সংস্পর্শে সাহায্য করতে পারে।

* সাইকোথেরাপি : কগনিটিভ বেহেভিওরাল থোবা ইন্টারপার্সোনাল থেরাপি জ্ঞানীয়-আচরণগত বা আন্তঃব্যক্তিক থেরাপির মাধ্যমে ভালো হতে পারে। অনেকসময় ওষুধও দরকার হতে পারে। যদি মনে করেন যে আপনি বিষণ্ণ হতে পারেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একজন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীকে দেখান। আর আপনি নিজেও কিছু  ছোট ছোট কাজ করতে পারেন-

* বড় কাজগুলোকে ছোট করে ভাগ করুন, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন এবং আপনি যা পারেন তা করুন।

* মানুষের আশেপাশে থাকার চেষ্টা করুন এবং বিশ্বস্ত কারও বন্ধু হোন। এটি সাধারণত একা এবং গোপন থাকার চেয়ে ভালো।

* এমন কিছু করুন যা আপনাকে ভালো বোধ করতে সাহায্য করে। সিনেমা দেখতে যাওয়া, বাগান করা; ধর্মীয়, সামাজিক বা অন্যান্য কাজে অংশ নেওয়া সাহায্য করতে পারে। অন্য কারো জন্য ভালো কিছু করলে তা আপনাকে ভালো বোধ করতেও সাহায্য করতে পারে।

* নিয়মিত ব্যায়াম করুন।

* আপনার মেজাজ ধীরে ধীরে ভালো হওয়ার আশা করুন, অবিলম্বে নয়। ভালো বোধ করতে সময় লাগে।

* স্বাস্থ্যকর, সুষম খাবার খান।

* অ্যালকোহল এবং ড্রাগ থেকে দূরে থাকুন। এগুলো হতাশাকে আরও খারাপ করে তুলতে পারে।

* বিষণ্ণতা দূর না হওয়া পর্যন্ত বড় সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করুন। যেমন-চাকরি পরিবর্তন, বিয়ে বা বিবাহবিচ্ছেদ। এক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করুন যারা আপনাকে ভালোভাবে জানেন এবং আপনার পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন।

লেখক : মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং লিভিং উইথ ওয়েলনেস-এর প্রতিষ্ঠাতা।