সাধারণত সপ্তাহে তিনবারেরও কম মল ত্যাগ করা বা মল ত্যাগ করা কঠিন হলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়। অনেক শিশুই এই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগতে পারে। এটি মা-বাবার জন্যও দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের সমস্যায় ঘরোয়া প্রতিকার বেছে নিলে ওষুধ ছাড়াই সমস্যার সমাধান করা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে শিশু অস্বস্তি ও বিরক্তি বোধ করতে পারে। আবার এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চললে তা আরও অনেক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়-

১. খাবারে ডায়েটারি ফাইবার বাড়ান

খাবারের তালিকায় ডায়েটারি ফাইবার বাড়ানো শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার অন্যতম কার্যকর উপায়। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যেমন দানা শস্য, ফলমূল এবং শাক-সবজি তার খাদ্যতালিকায় যোগ করুন। ফাইবার মল বৃদ্ধি করে, মলত্যাগের উন্নতি করে। ফাইবার সমৃদ্ধ স্ন্যাকস যেমন টুকরো করা আপেল, নাশপাতি বা গাজরও এক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে ফাইবার সমৃদ্ধ স্মুদিও তৈরি করতে পারেন। কলা এবং স্ট্রবেরির মতো ফল দই এবং এক চা চামচ চিয়া সীডের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। পানীয়টি আপনার শিশু উপভোগ করবে এবং এটি তার মলত্যাগের উন্নতিও করবে।

২. হাইড্রেটেড রাখুন

ডিহাইড্রেশন কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। আপনার শিশু সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখুন। হাইড্রেশন মল নরম করতে সাহায্য করে, মল ত্যাগ করা সহজ করে তোলে। পানি, তাজা ফলের রস, লেবুর শরবত, ডাবের  পানি ইত্যাদি তার হাইড্রেশনের মাত্রা সাহায্য করবে।

৩. প্রোবায়োটিক খাবার দিন

প্রোবায়োটিক পাচনতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং স্বাস্থ্যকর অন্ত্র বজায় রাখতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে দই হতে পারে একটি কার্যকরী খাবার। এর উপকারী অণুজীব আপনার সন্তানের পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শিশু যদি সাধারণ দই খেতে না চায় তাহলে তাকে সবজির রায়তা বা ফলের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন।

৪. টয়লেটের রুটিন ঠিক করে দিন

আপনার সন্তানের জন্য একটি নিয়মিত টয়লেট রুটিন ঠিক করুন। তাদের প্রতিদিন একই সময়ে টয়লেট ব্যবহার করতে উৎসাহিত করুন, বিশেষ করে খাবারের পরে, যখন শরীরের ন্যাচারাল রিফ্লেক্সেস সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। আপনার শিশুকে দিনে অন্তত দুবার ১০ মিনিটের জন্য টয়লেটে বসিয়ে দিন। টয়লেট সিটে ফোন বা অন্য কোনো ডিভাইস ব্যবহার করতে দেবেন না। এই রুটিন অন্ত্র সুস্থ রাখবে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে।

৫. সকাল ও রাতের রুটিন

প্রতিদিন সকালে আপনার শিশুকে এক গ্লাস হালকা গরম পানি পান করতে দিন। এছাড়াও তাকে সারারাত ভিজিয়ে রাখা ৪-৫টি কিশমিশ খেতে দিন। রাতে ঘুমানোর সময় এক গ্লাস গরম গরুর দুধে আধা চা চামচ ঘি মিশিয়ে খেতে দিন। আপনার সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেট ফাঁপা বা গ্যাস হলে রাতে ভারী কোনো খাবার খেতে দেবেন না।

৬. শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হলে রান্নার নির্দেশাবলী

যদি আপনার শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে, তাহলে তাকে কাঁচা খাবারের পরিবর্তে সেদ্ধ খাবার দিন কারণ কাঁচা খাবার তার হজমের জন্য কঠিন হতে পারে। তার খাবারে চিনির পরিমাণ কমিয়ে দিন এবং যতক্ষণ না কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ততক্ষণ খাদ্য থেকে যেকোনো জাঙ্ক এবং শুকনো প্যাকেটজাত খাবার বাদ দিন। ভালো হজম এবং অন্ত্রের গতি বাড়াতে তাকে তাজা রান্না করা খাবার দিন।

৭. কখন ডাক্তার দেখাবেন

যদিও এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কার্যকর হতে পারে, তবে আপনার সন্তানের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোষ্ঠকাঠিন্য অব্যাহত থাকে বা পেটে ব্যথা, মলে রক্ত বা ওজন হ্রাসের মতো গুরুতর লক্ষণ থাকে, তাহলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।