বাড়ির ভেতরটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। তবে শুধু বাইরে থেকে দেখতেই পরিষ্কার নয়, সেইসঙ্গে জীবাণুমুক্তও থাকা চাই। বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর বজায় রাখা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, যদি আপনি জীবাণুদের লুকিয়ে থাকা সাধারণ জায়গাগুলো সনাক্ত এবং স্যানিটাইজ না করেন। হাই-টাচ এলাকা থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস মেরে ফেলা পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে আপনার প্রথম কাজ হওয়া উচিত, বিশেষ করে যদি আপনার বাড়িতে শিশু থাকে।

নিরাপদ এবং সঠিক পরিচ্ছন্নতার উপাদান ব্যবহার করে প্রতিটি কোণ এবং ছিদ্র পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্ট কৌশলগুলোর সাহায্যে আপনি জীবাণু দূর করতে এবং অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে পারবেন। জেনে নিন আপনার বাড়ির ছয়টি জীবাণু হটস্পট সম্পর্কে, যেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখা জরুরি-

১. সুইচ এবং দরজার হাতল

সাধারণত বেশি স্পর্শ করা বা বেশি মানুষ থাকার জায়গাগুলো জীবাণু এবং ভাইরাসের সক্রিয় হটস্পট হয়ে থাকে। বাতি বা ফ্যানের সুইচ এবং দরজার হাতলের মতো জায়গাগুলোতে জীবাণু নিয়ে লুকিয়ে থাকে। ঘন ঘন এবং সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস ভালো, তবে এর পাশাপাশি প্রতিদিন সুইচ এবং দরজা হাতল স্যানিটাইজ করতে ভুলবেন না। জীবাণুর বিস্তার রোধ করার জন্য আপনি সাদা ভিনেগার বা ব্লিচ ওয়াটার ব্যবহার করতে পারেন। সম পরিমাণ ভিনেগার এবং পানি মিশিয়ে তা দিয়ে ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতির সুইচ, দরজার হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার করুন। এক্ষেত্রে প্রথমে হালকা স্প্রে করে নিয়ে একটি পরিষ্কার মাইক্রোফাইবার কাপড় ব্যবহার করে মুছতে হবে।

২. রান্নাঘরের সিঙ্ক এবং কল

কিছু রিপোর্ট অনুসারে, রান্নাঘরের সিঙ্কে টয়লেট সিটের চেয়েও বেশি জীবাণু থাকে। আপনার সিঙ্কে ভিজিয়ে রাখা অবশিষ্ট খাদ্য কণা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া যেমন সালমোনেলা এবং ইকোলির প্রজনন স্থল হিসেবে কাজ করতে পারে। এগুলো সহজেই আপনার হাতের স্পর্শ পেতে পারে এবং রান্নাঘরের অন্যান্য এলাকায় এমনকি খাবারেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। জীবাণুর বিস্তার রোধ করার সর্বোত্তম উপায় হলো প্রতিদিন আপনার নোংরা থালা-বাসন ধোয়া এবং সিঙ্কটি পরিষ্কার রাখা। সপ্তাহে একবার ব্লিচ এবং পানির দ্রবণ ব্যবহার করে রান্নাঘরের সিঙ্ককে জীবাণুমুক্ত করা। প্রতিবার থালা-বাসন, সিঙ্ক ইত্যাদি ধোয়ার পর সাবান দিয়ে আপনার হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিন।

৩. বাথরুম

যেখানে আপনি আপনার শরীর থেকে ময়লা ঝেড়ে ফেলেন সেই জায়গাই অসুস্থতা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার প্রজনন ক্ষেত্র। গরম ঝরনার আর্দ্রতা বাথরুমে জীবাণু তৈরি করে এবং বৃদ্ধি ঘটায়। আপনার বাথরুমের ড্রেন, ঝরনার মুখ, কল, তোয়ালে রেল, মেঝে, টয়লেটের আসন, দেয়াল, দরজার হাতল ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। এগুলো প্রতিদিন কার্যকর জীবাণুনাশক এবং পরিষ্কার মাইক্রোফাইবার কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।

৪. মরিচ এবং লবণ রাখার পাত্র

এগুলো হলো একটি ঘর জীবাণুমুক্ত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপেক্ষিত আইটেমগুলির মধ্যে অন্যতম। গবেষণায় দেখা গেছে যে মরিচ এবং লবণের পাত্রগুলোতে ক্ষতিকারক জীবাণু লুকিয়ে থাকে এবং ঠান্ডা ভাইরাস ছড়াতে পারে। ভাইরাসগুলো কয়েক ঘণ্টা থেকে ৩ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। সুতরাং জীবাণুর বিস্তার রোধ করতে লবণ, মরিচ এবং অন্যান্য মসলা রাখার পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

৫. টুথব্রাশ

আপনার টুথব্রাশটি জীবাণু প্রজনন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে একটি যা অসুস্থতার কারণ হতে পারে। সব সময় মনে রাখবেন, জীবাণু আর্দ্র অঞ্চলে তৈরি হয় এবং সেই কারণেই আপনার টুথব্রাশটি যেখানে সহজে শুকিয়ে যায় সেখানে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এটি আপনার টয়লেট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। কারণ টয়লেট ফ্লাশ করার ফলে দূষিত পানি বাষ্প আকারে ব্যাকটেরিয়া ছড়ায় এবং বাতাসে মিশে যায়। এই জীবাণু জীবাণু দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সক্রিয় থাকতে পারে, তাই আপনার টুথব্রাশ আপনার টয়লেট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।

৬. টিভির রিমোট

বাড়িতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জিনিসগুলোর মধ্যে একটি হলো টিভির রিমোট। এটি হাত থেকে হাতে ঘুরতেই থাকে। পছন্দের চ্যানেল দেখার জন্য এটি প্রয়োজন হয়ই। এছাড়া এটি সোফার ভাঁজে, বিছানার ওপর, মেঝে ইত্যাদি জায়গায় পড়ে থাকে অনেক সময়। যে কারণে রিমোটের গায়ে জীবাণু আরও বেশি জমে। তাই টিভির রিমোট নিয়মিত পরিষ্কার করা জরুরি।