দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক, অনেক ভালো বোঝাপড়া। শুরুতে যে সম্পর্কটা অনেক টাটকা একটা সময় টুকটাক তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া থেকে সেই সম্পর্কের রসায়নে চাকচিক্য হারাতে থাকে। দুজনের নিজস্ব মত, চিন্তায় ভিন্নতা ও ইগো বেশি প্রাধান্য পাওয়া শুরু করলেই সম্পর্কে দূরত্ব দৃশ্যমাণ হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজস্ব কিছু অভ্যাস, ভাবনা ও তার বহিঃপ্রকাশই প্রেম ভেঙে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অনেক চড়াই–উতরাই পেরনো পুরনো সম্পর্কও কিছু ভুল চিন্তাভাবনার কারণে ভেঙে যেতে পারে। অনেক সময়েই আমরা বুঝতে পারিনা ঠিক কী কারণে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। 

ঠিক কী কী কারণ ও অভ্যাসের ফলে ভেঙে যেতে পারে সম্পর্ক, যা বলছেন মনোবিদরা

এক. 
কেউ পারফেক্ট নয়, বদলানোর চেষ্টা করবেন না

সব মানুষেরই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা ও জীবনদর্শন রয়েছে। তাই তাকে নিজের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। জোর করে কাউকে বদলানোর চেষ্টা করা অথবা তাকে একদম পারফেক্ট বানানোর চেষ্টা করা চূড়ান্ত ভুল। প্রেমের সম্পর্কে এটাই ফিরে আসে বার বার। সঙ্গীকে নিজেদের মতো করে বদলানোর চেষ্টা করি আমরা, ফলে কম সময়েই সম্পর্কে বিরক্তি ও তিক্ততা চলে আসে।

দুই.
মনের আকাশে সন্দেহ

আকর্ষণ হারানোর ভয়, পুরনো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই জন্ম দেয় সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ। পরবর্তীতে যার বিষবৃক্ষ হওয়ার ভয় প্রবল। যুগটাই নেটিজেনদের। মুঠোয় মোবাইল আর তাতে রংচঙে পৃথিবীর ডাক। প্রতিদিন হাজারটা প্রলোভন দেখায় সামাজিক মাধ্যম। আর সেখানেই ঘাপটি মেরে থাকে যত ভুল আর সন্দেহ। পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সন্দেহপ্রবণতা বেশি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্দেহ প্রবণতার জন্ম হয় অধিকারবোধ থেকে। মনোবিদরা মনে করছেন, অতিরিক্ত অধিকারবোধ আসলে সন্দেহপ্রবণতারই প্রথম ধাপ।

তিন.
পারস্পরিক কথোপকথন

বর্তমান সময়ে এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। কথোপকথন আর তেমন হয় কোথায়। ভার্চুয়াল দুনিয়ায় সবাই এত ব্যস্ত যে, ফুরফুরে প্রেমের কথা বলার সময় নেই। নিজের ভাবনা, মতামতের প্রকাশ না হলে দূরত্ব বাড়বেই। সম্পর্কে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করতে পারে এই পারস্পরিক কথোপকথনই। রাগ, দুঃখ, অভিমান, ভালবাসার সুর আর কানে বাজছে না।

চার. 
অতিরিক্ত অধিকারবোধ

অতিরিক্ত অধিকারবোধ অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কের অন্যতম কারণ। সঙ্গীর সব বিষয়ে নিজের মালিকানা ফলানো বা তার ইচ্ছে-অনিচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা আখেরে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি হয়। 

পাঁচ.
শারীরিক সম্পর্কে আর আগ্রহী নয় সঙ্গী?

সম্পর্ক গড়তে যতটা না সময় লাগে, তার চেয়ে বেশি সময় যত্ন নিতে হয় সেই সম্পর্ককে সুন্দর করে তুলতে আর বাঁচিয়ে রাখতে। সম্পর্ক যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন অনেক সময়ই তা একঘেয়ে হয়ে ওঠে। আর এই একঘেয়েমি থেকেই দূরত্ব বাড়তে থাকে সম্পর্কে। শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কই সুস্থ প্রেম টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি নয়। অনেকেই ভাবেন সঙ্গী শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ হারাচ্ছে মানে সে অন্যের প্রতি আসক্ত। তখনই কমে যায় কমিউনিকেশন, পরস্পরকে জানা-বোঝার পালাতেও ইতি পড়ে যায়। ফলে সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মনোবিদরা বলছেন, সেক্ষেত্রে কমিউনিকেশন জরুরি। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ।

এমএসএ