স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখো
আপনি জানেন কি? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৮ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে। দিন প্রতি যার হার দাঁড়ায় ২ হাজার ১৯১ জন। প্রতি লাখে প্রায় ১৬ জন। এবং প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি) এর এক তথ্যগ্রাফিতে তুলে ধরা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার হার নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি। এবং মোট আত্মহত্যাকারীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৮%) ৫০ বছর বয়সের আগে আত্মহত্যা করে থাকে। বিশ্বের সব অঞ্চলেই আত্মহত্যা সংঘঠিত হয়, তবে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার তিন চতুর্থাংশ (৭৭%), নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঘটেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্রের তথ্য ও বাংলাদেশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৩২ জন মানুষ আত্মহত্যা করে থাকেন। ২০১৬ সালে দেশে ৯ হাজারেরও কম আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে এ সংখ্যা যথাক্রমে ১০ হাজার ও ১১ হাজারের বেশি ছিল। ২০২০ সালে অর্থাৎ করোনা মহামারিকালে সারা দেশে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এবং ২০২২ সালে ৩৬৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আত্মহত্যার প্রবণতার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দশম স্থানে রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সাধারণত দুইভাবে মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে- ১) আবেগপ্রবণ হয়ে এবং ২) পরিকল্পনা করে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি আত্মহত্যা হয় আবেগপ্রবণ হয়ে। গবেষণায় দেখা যায়, ৯০ শতাংশ আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তির কমপক্ষে একটি হলেও মানসিক রোগ থাকে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ডিপ্রেশন।
আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণ
শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন, শারীরিক এবং মানসিক অসুস্থতা, পারিবারিক কলহ এবং সম্পর্কের বিচ্ছেদ, মাদকের ব্যবহার, অর্থনৈতিক সমস্যা, পড়াশোনার চাপ, বেকারত্ব, পারিবারিক আত্মহত্যার ইতিহাস, বিভিন্ন সামাজিক চাপ, হতাশা, প্রেমে ব্যর্থতা, চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার মধ্যে পার্থক্য, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যহীনতা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ইত্যাদি।
আত্মহত্যার ঝুঁকির কিছু লক্ষণ
ব্যক্তির মৌখিক হুমকি, ঘন ঘন মৃত্যু সংক্রান্ত ইচ্ছার কথা বলা, আপনার সন্তান বা কাছের মানুষটি হঠাৎ করেই চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে, তার চেহারা, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে খুবই উদাসীন থাকে বা ওজনটাও খুব দ্রুত বাড়ছে বা কমছে, ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়াতে মৃত্যু নিয়ে বেশি পোস্ট বা ঘটনা দিচ্ছে, শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা ইত্যাদি।
করণীয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং, ইতিবাচক মনোভাব, সহানুভূতি, বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করা, কথা বলার ও আবেগ ভাগাভাগি করার পরিবেশ তৈরি করা এবং আত্ম-সমালোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আত্মহত্যার প্রবণতা কমাতে নীতিনির্ধারকদের এগিয়ে আসা জরুরি এবং আরো বেশি থেকে গণসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন (আইএএসপি) এবং বৈশ্বিক মানসিক স্বাস্থ্য ফেডারেশন একযোগে ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর ‘বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস’ পালন করে আসছে।
(২০২১-২০২৩) বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের ত্রিবার্ষিক থিম হলো- ‘কর্মের মাধ্যমে আশা তৈরি করো’ (Creating hope through action)। থিমটি ঠিক এমন উৎসাহ দেয় যে, আমাদের জীবনে আত্মহত্যার অনেকগুলো বিকল্পই রয়েছে এবং সেই বিকল্প ভালো কাজগুলোর মাধ্যমে আমাদের সবার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করতে পারি এবং এর মাধ্যমে আলোর ধারায় অনুপ্রাণিত করার মতো অনেক বিষয় রয়েছে।
লেখক : লিভিং উইথ ওয়েলনেস এর প্রতিষ্ঠাতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।