অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়মিত করার ঘরোয়া উপায়
মাসের এই সময়টা নারীদের থেকে রেহাই নেই। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা এখন মানুষ সহজভাবে গ্রহণ করতে শেখেনি। যে কারণে মেয়েদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতন নয়। পিরিয়ড কারও কারও জন্য যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে। তার সঙ্গে যোগ হয় কোমর ও পেটে ব্যথা।
পিরিয়ড চক্রের দৈর্ঘ্য (পিরিয়ডের শুরু থেকে পরবর্তী পিরিয়ড শুরুর মধ্যকার সময়) সাধারণত ২৮ দিন হয়; যদি এটি এক সপ্তাহের বেশি দেরিতে শুরু হয় তবে তাকে অনিয়মিত বলা যেতে পারে। অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য অনেক ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। অনিয়মিত পিরিয়ডকে ডাক্তারি ভাষায় অলিগোমেনোরিয়া বলা হয়, যা নারীদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। অনেককিছুই এই সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি, অ্যানিমিয়া, মেনোপজ, থাইরয়েড, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, যকৃতের রোগ, যক্ষ্মা, গর্ভপাত এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা।
বিজ্ঞাপন
লাইফস্টাইল ট্রিগার যেমন ব্যায়াম, ধূমপান, অ্যালকোহল অপব্যবহার, ক্যাফেইন, ভ্রমণ, স্ট্রেস, কিছু ওষুধ এবং জন্মনিয়ন্ত্রণের ওষুধও এই সমস্যায় অবদান রাখতে পারে। মেনোপজের সময় অনিয়মিত পিরিয়ড সাধারণ ঘটনা। জেনে নিন কিছু ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে যা আপনাকে অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি দিতে পারবে-
কাঁচা পেঁপে খাওয়া
কাঁচা পেঁপে পিরিয়ডের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হয়। কারণ এটি জরায়ুতে পেশী তন্তুকে সংকুচিত করতে সাহায্য করে। কয়েক মাস নিয়মিত কাঁচা পেঁপের রস পান করলে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর হবে। তবে পিরিয়ড চলাকালীন এটি পান করবেন না।
হলুদের ব্যবহার
হলুদকে সেরা ঔষধি ভেষজগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা বেশ উষ্ণতাদায়ক। এটি পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক। অ্যান্টিস্পাসমোডিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য মাসিকের ব্যথা উপশম করে। দুধ, মধু বা গুড়ের সঙ্গে এক-চতুর্থাংশ চা চামচ হলুদ খান। কয়েক সপ্তাহের জন্য বা অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এটি প্রতিদিন খান।
অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরা হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিকভাবে অনিয়মিত পিরিয়ডের চিকিৎসা করতে সাহায্য করে। সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়ার জন্য একটি অ্যালোভেরা পাতা থেকে তাজা অ্যালোভেরা জেল বের করুন, এরপর এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালের নাস্তা করার আগে এটি খান। আপনার পিরিয়পের সময় এই প্রতিকারটি ব্যবহার করবেন না।
আদার ব্যবহার
১ টেবিল চামচ আদা ৫ মিনিটের জন্য ফুটিয়ে নিন। এরপর এর সঙ্গে সামান্য মধু যোগ করুন। পানীয়টি দিনে তিনবার খাবারের পর পান করুন। মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ এবং অনিয়মিত পিরিয়ড থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আদা অত্যন্ত কার্যকরী।
জিরার ব্যবহার
জিরায় রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। অনিয়মিত পিরিয়ডের চিকিৎসায় ভেজানো জিরা ব্যবহার করা যেতে পারে। ২ চামচ জিরা নিয়ে সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে জিরা ছেঁকে নিয়ে পানিটুকু পান করুন। পিরিয়ড নিয়মিত করার জন্য প্রতিদিন এই পানি পান করুন।
দারুচিনি খাওয়া
দারুচিনি শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতে সাহায্য করে না, এটি মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এটি শরীরে উষ্ণতা বজায় রাখতে কাজ করে। এক গ্লাস গরম দুধ নিয়ে তাতে এক চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন। এটি অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী।
যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন
স্ট্রেস শরীরের হরমোনের ভারসাম্যহীনতার প্রাথমিক কারণগুলোর মধ্যে একটি যা মাসিকের অনিয়মকে ট্রিগার করে। যোগব্যায়াম এবং মেডিটেশন মানসিক চাপ উপশম করতে সাহায্য করে। মেডিটেশন শরীরে নিখুঁত হরমোনের ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে। এই দুটি ওষুধ ছাড়াই অনিয়মিত পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পদ্ধতি।