ব্ল্যাক হানি সম্পর্কে যা জানা জরুরি
কোনোকিছুর মিষ্টতা বোঝাতে আমরা যে শব্দটি ব্যবহার করি তা হলো মধু। কেবল খাবারই নয়, মানুষের আচরণ বোঝাতেও মধুর উপমা টানা হয়। এমনকী কারও মুখের ভাষা কটু হলেও আমরা বলে থাকি, ‘তোকে কি জন্মের পরে মুখে মধু দেয়নি?’। তবে এক বছরের আগে শিশুর মুখে মধু দেওয়া যাবে না, আপাতত সে প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। আমাদের জন্য উপকারী যত খাবার আছে তার একেবারে উপরের দিকেই থাকে মধুর নাম।
মধু হলো মিষ্টি স্বাদের এক ধরনের ঘন তরল পদার্থ। এটি আপনি চাইলেও তৈরি করতে পারবেন না যদি মৌমাছিরা আপনাকে সাহায্য না করে। ক্ষুদে পতঙ্গ মৌমাছি দল বেঁধে বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। এটি খেতে সুমিষ্ট ও সুস্বাদু। শুধু তাই নয়, মধুতে থাকে বেশ কয়েকটি ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, খনিজ এবং পুষ্টি উপাদান। প্রাচীনকাল থেকেই খাদ্য এবং ওষুধের মূল উপাদান হিসাবে ব্যবহার হয়ে আসছে এই মধু।
বিজ্ঞাপন
মূলত মধুর রঙের ওপর ভিত্তি করে এর আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়। যেমন হালকা, গাঢ় বা যে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়েছে সেই ফুলের নাম অনুসারে। তবে নিজস্ব রঙ, গঠন, স্বাদ, পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে ভোক্তাদের মধ্যে ব্ল্যাক হানির ব্যবহার বাড়ছে।
ব্ল্যাক হানি কী?
মধুর রঙ মূলত আহরণ করা ফুলের ধরনের উপর নির্ভর করে। কিছু ফুল সারা বছর ফোটে আর কিছু ফুল ফোটে কেবল নির্দিষ্ট মৌসুমে। সময়ের ভিন্নতার ওপর নির্ভর করেও মধুর রঙ পরিবর্তিত হয়। আমরা বাজার থেকে যে মধু কিনে আনি তার বেশিরভাগই হালকা বা স্বচ্ছ রঙের হয়ে থাকে। এদিকে ব্ল্যাক হানি কিন্তু গাঢ় বাদামি বা কালচে রঙের হয়ে থাকে। যে কারণে ব্ল্যাক হানিকে গাঢ় মধু বলেও ডাকা হয়। যেসব ফুলের পরাগ গাঢ় বা কালচে রঙের, সেখান থেকে সংগ্রহ করা মধুকে ব্ল্যাক হানি বলা হয়। এই মধুতে প্রচুর খনিজ উপাদান তাকে। আবার মধু স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় মৌচাকের ভেতরে থাকলে অক্সিডেশনের কারণে এর রঙ কালো হতে পারে। ব্ল্যাক হানি সাধারণ মধুর থেকেও মিষ্টি স্বাদের হয়।
ব্ল্যাক হানির প্রকারভেদ
ব্ল্যাক হানির কিছু প্রকারের মধ্যে রয়েছে বাকউইট, ব্ল্যাকবাট, ওয়াইল্ডফ্লাওয়ার, থাইম, ড্যান্ডেলিয়ন, জাররাহ, চেস্টনাট, মেডো ইত্যাদি। এই জাতগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য শক্তিশালী পুষ্টি রয়েছে। যেমন ধরুন, বাকউইট ফুল থেকে আহরিত মধু অত্যন্ত পুষ্টিকর। গ্লেন ঈগল ফরেস্টের ব্ল্যাকবাট নামক এক ধরনের ইউক্যালিপটাস থেকে ব্ল্যাকবাট মধু সংগ্রহ করা হয়, যা বেশ ঘন এবং এর স্বাদ অনেকটা শরবতের মতো। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, ব্ল্যাক হানি হজম প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। সেইসঙ্গ ত্বকের স্বাস্থ্য, ঘুম এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতারও উন্নতি করে। এগুলো ছাড়াও পশ্চিম আফ্রিকার গহীন বন থেকে আহরিত ব্ল্যাক হানি ভিটামিন, খনিজ, এনজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উপাদানে ভরপুর যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
আমাদের দেশে ব্ল্যাক হানির জনপ্রিয়তা
ইন্টারনেটের কল্যাণে সাধারণ মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া, গুগল কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে এখন তারা বিভিন্ন ধরনের ভিনদেশি খাবারের উপকারিতা সম্পর্কেও জানতে পারছে। খাবারে মিষ্টি স্বাদ যোগ করা ছাড়াও মধু বহু যুগ থেকে বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। সর্দি, কাশি এবং ফুসফুসের অসুখের চিকিৎসায় মধু ব্যবহার করার ইতিহাস রয়েছে। এটি শরীরে তাপ এবং শক্তি প্রদান করে। ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ মধু আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়। এমনকী রূপচর্চার কাজেও এটি অপরিহার্য হিসেবে গণ্য করা হয়।
আমাদের দেশে উৎকৃষ্ট মানের মধু বলতে মূলত সুন্দরবনের মধুকেই বোঝানো হতো। আগে মৌয়ালরা দেশের বিভিন্ন বাজারে মধু বিক্রি করতেন। দেশে মধুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষও শুরু হয়। এ কারণে বাংলাদেশে সুন্দরবনের মধু ছাড়াও সূর্যমুখী ফুলের মধু ও কালোজিরার মধু সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। খোলা মধু ভেজাল মিশ্রিত হওয়ার কারণে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধু ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হচ্ছে। স্থানীয় ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বেশ কিছু আন্তর্জাতিক জাতের ব্র্যান্ডেরও গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। সেসব ব্র্যান্ডের মধু দেশের বিভিন্ন মুদি দোকান, সুপার শপ, ই-কমার্স সাইট এবং বিভিন্ন ফেসবুক পেইজে কিনতে পাওয়া যায়। যে কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা সহজেই ব্ল্যাক হানি সংগ্রহ ও বিক্রি করতে পারছেন। ব্ল্যাক হানির পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে আমাদের দেশেও এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।
ব্ল্যাক হানির উপকারিতা
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ মধুর তুলনায় ব্ল্যাক হানিতে পানির পরিমাণ কম এবং পুষ্টির পরিমাণ বেশি থাকে। পুষ্টিগুণ বেশি থাকায় ভোক্তাদের মধ্যে ব্ল্যাক হানি কেনার প্রবণতা বাড়ছে। ব্ল্যাক হানিতে প্রচুর ফ্রুক্টোজ থাকে। যে কারণে অল্প মধুতেই অনেক বেশি মিষ্টি পাওয়া যায়। এটি প্রতিদিনের রান্না কিংবা বেকিংয়েও ব্যবহার করতে পারবেন। মিষ্টি স্বাদের হলেও ব্ল্যাক হানি আমাদের ব্লাড সুগারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না। ব্ল্যাক হানি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ, যা আমাদের কোষের ক্ষতি করে এমন ফ্রি র্যাডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। রক্তচাপ কমানো এবং নিয়মিত হার্টবিট বজায় রাখতে কাজ করে ব্ল্যাক হানি। সেইসঙ্গে এটি আমাদের শরীরের শরীরের সুস্থ কোষের মৃত্যুর হারও কমায়। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই মানবদেহে কাটা বা পোড়ার চিকিৎসা হিসেবে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। তুলনামূলক বেশি খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি দ্রুত কাটা এবং পোড়া নিরাময় করতে পারে। সাধারণ সর্দি নিরাময়ের পাশাপাশি ত্বকের যত্নের জন্য এই মধু উপকারী।
ব্ল্যাক হানি কোথায় পাবেন?
পুষ্টিগুণ এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতার কারণে বিশ্বব্যাপী ব্ল্যাক হানির জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। তারই সূত্র ধরে বেশ কিছু বিদেশি ব্র্যান্ড দেশের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপারস্টোর, ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স সাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও অর্গানিক নিউট্রিশন লিমিটেড দেশের প্রথম কোম্পানি, যা কারকুমা ব্র্যান্ড নামে ইউএসডিএ অর্গানিক সার্টিফাইড অর্গানিক ব্ল্যাক হানি বাজারজাত করছে।