কদম ফুলের কান্না
কদম ফুল, অনেকের মতো আমারও অনেক পছন্দের। ফুলটি বর্ষার প্রতীক। আষাঢ়ে বর্ষায় বৃষ্টিস্নাত ফোটা কদম চিরাচরিত হলেও প্রকৃতির পালাবদলে ব্যত্যয় ঘটেছে। অপ্রতুল বৃষ্টির বর্ষা যেন এখনও ধুতে পারেনি ভরা যৌবনের কদমকে। ফলে কান্নাহীন আষাঢ়-শ্রাবণ কদম ফুলকে উপহার দিয়েছে কষ্ট। শ্রাবণের আকাশে মেঘেদের লুটোপুটি থাকলেও ঝরাতে পারেনি বৃষ্টি। যেন কাগজে-কলমে বর্ষার বৃষ্টি এসেছিল ঠিকই, কিন্তু কথা না রেখে চলে গেছে।
ক্যালেন্ডারের পাতা আষাঢ় গত হয়ে খেয়েছে শ্রাবণের অর্ধেক। বৃষ্টির কাছে কি বা আষাঢ়, কিইবা শ্রাবণ। পাত্তা দেয়নি কাউকে। তাই তো ভরা বর্ষায় বৃষ্টির দেখা নেই। বর্ষার সাক্ষী কদম ফুল। বর্ষা ছাড়া যেমন কদম ফুল মানায় না, তেমনি কদম ফুল ছাড়া বর্ষা। এ বর্ষার বৃষ্টি কদম ফুলের দুঃখ ঘোচাতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
বহুকাল বর্ষা আর কদম ফুল একে অপরকে আলিঙ্গন করে আছে। বছর ঘুরে নিজস্ব ভঙ্গিতেই আবার এসেছে বর্ষা। সঙ্গে এনেছে প্রিয় কদম ফুল। গ্রীষ্মের প্রখরতায় আম, কাঁঠালের ঘ্রাণে মুখর চারপাশ। ঠিক তখনই আষাঢ়ে বাদল দিনের আগমন। তবে এই বর্ষা সেই বর্ষা নয়। এ যেন এক নীরব বর্ষা। কাঁদতে জানে না, কাঁদাতে জানে না। ভাসাতে জানে না, জানে না ভাসতে। এক বৃষ্টিহীন বর্ষার সাক্ষী হয়ে জল চেয়ে যাচ্ছে আষাঢ় এর বন্ধ শ্রাবণ। আষাঢ় গেল, শ্রাবণও যাচ্ছে। কিন্তু ঠিকঠাক বৃষ্টি নেই। তাতে কী হয়েছে? তবুও ফুটেছে কদম ফুলের দলেরা। এই কদম ফুলকে ডাকা হয়- বৃত্তপুষ্প, মেঘাগমপ্রিয়, কর্ণপূরক, ভৃঙ্গবল্লভ, মঞ্জুকেশিনী, পুলকি, সর্ষপ, প্রাবৃষ্য, ললনাপ্রিয়, সুরভি, সিন্ধুপুষ্প নামেও।
পুলকি নামের রূপবতী কদম। দিচ্ছে সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি। ডালের ফাঁকে গোল কদমের হলুদের ওপরে সরু সাদা পাপড়িগুলো ফুলকে সাজিয়ে তুলেছে ভিন্নভাবে। বর্ষার সঙ্গে মেঘের গভীর মিতালি। এই বর্ষার কদম ফুলকে অনেকেই আবার ডাকে ‘মেঘাগমপ্রিয়’ নামেও। তবে নারীদের খোপার এই তারা ফুলকে অনেকেই ‘ললনাপ্রিয়’ বলেও তুলনা করেছেন।
বাংলার প্রকৃতিতে কদম ফুল আর বর্ষার ভালোবাসা চিরকালের। বর্ষার শুরুতেই কদম ফোটে বৃষ্টির ভালোবাসার ছোঁয়া নিতে। বৃষ্টিতে ভিজে নাচতে থাকে পুবালি বাতাসে। বৃষ্টিভেজা কদম দেখে যে কবি হৃদয় নেচে উঠেছে। পেয়েছে প্রশান্তি কত চোখ। কদম ফুল আর বর্ষার প্রেম দেখে তাই তো কবিগুরু রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’
সারাবছর অবহেলায় পড়ে থাকা কদম গাছটি বর্ষা এলেই হয়ে উঠে প্রেমিক হৃদয়ের ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। বৃষ্টিভেজা কদম ফুলের পরশ নিতে ব্যাকুল থাকে মন। বর্ষার গানে কদম ফুলের ঠাঁই না হলে যেন কেমন জানি শূন্যতা লাগে। বৃষ্টিতে ভেজার আশা পূরণ হয়নি কদম ফুলের। বর্ষার এই সময়ে প্রতি বছর প্রচুর কদম ফুল ফোটে, ছোট-বড় গাছগুলোতে। তার ব্যত্যয় ঘটেনি এই বছরের। তবে এ বছর গাছে গাছে কদম ফুল বেশি দিন শোভা পায়নি। বৃষ্টিহীনতা আর খরার কারণে কদম ফুলগুলো আকারে ছোট হয়েছে। একইসঙ্গে অল্প সময়ের মধ্যে ফুলগুলোর পাপড়িগুলোও খরায় পুড়ে ঝরে গেছে।
তবে এখন গাছে গাছে ফুলের পরিবর্তে কদম ঝুলে আছে। কদমগুলোর বেশিরভাগই পাপড়ি ঝরে গেছে। কিছু কিছু কদমের পাপড়ি থাকলেও তা মরে গেছে। হালকা বাতাসেই ঝরে পড়ছে। যে গাছগুলোতে এক সপ্তাহ আগেও ছোট-বড় কদম ফুলের দেখা মিলেছে। সেই গাছগুলোতে কদম ছাড়া ফুলের দেখা পাওয়া ভার।
উত্তরের বরেন্দ্র এলাকায় রাজশাহী। দিন দিন খরা বাড়ছে, বাড়ছে উষ্ণতা। আর কমছে বৃষ্টিপাত। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশ ভালোভাবেই আঁচ করতে পারে এই অঞ্চলের মানুষ। গ্রীষ্মে দাবদাহ। বৃষ্টিপাতও কম।