দৈনন্দিন ব্যস্ততা কিংবা কাজের চাপে একটা সময় পুরানো বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা কমে যায়। অনেক সময় থাকে না যোগাযোগও। তাই বলে যে মনে পড়ে না তা কিন্তু নয়। পুরোনো অ্যালবামে নজর দিলে স্মৃতিতে ভেসে ওঠে স্কুল-কলেজের বন্ধুদের মুখ। মন ফিরে পেতে চায় ফেলে আসা দিন।

এমনই এক গল্প জানাবো আপনাদের। ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা জীবন সায়াহ্নে এসে মনে করেছেন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের। সুদূর বার্মিংহাম থেকেও এই দেশ ও বাল্যবন্ধুর জন্য মন পুড়ছিল তার। আর এই অবস্থা দেখে মা ও তার বান্ধবীর ছোটবেলার ছবি ‘ময়মনসিংহ হেল্পলাইন’ নামে ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিয়ে সন্ধান চান মেয়ে।

ময়মনসিংহ শহরের নামকরা বিদ্যাপীঠ বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৫৮ ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন উজ্জলা দাসগুপ্ত, জামিলা খাতুন। ফেসবুকে খোঁজ চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। আর জামিলা খাতুনের ছেলে জামিল আহমেদের নজরে আসে পোস্টটি। ছবিটি দেখান মাকে। চেনার পরই যোগাযোগ করেন পোস্টদাতার সঙ্গে।

এক, দুই নয়, ক্যালেন্ডারের হিসাবে পার হয়ে গেছে প্রায় ৫ যুগ। সাদা-সবুজ স্কুল ড্রেস পরা, বেনি ঝোলানো কিশোরীদের চুল এখন সাদা, ভাজ পড়ে গেছে চামড়ায়। কমে গেছে চোখের জ্যোতিও। কিন্তু মনটা এখনো রয়ে গেছে সেই প্রায় ৬০ বছর আগের মতোই। ভিডিও কলের সবুজ বোতামে চাপ দিয়েই খুশিতে আটখানা দুই বান্ধবী।

ময়মনসিংহ নগরীর সানকিপাড়া এলাকায় জামিলা খাতুনের বাসায় গিয়ে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। দুই বান্ধবীর কথোপকথনে যেন সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপাড় আর এপাড়ের দূরত্ব কমে গেছে নিমিষেই। ইংল্যান্ড আর বাংলাদেশ নয়, মনে হচ্ছে দুই বান্ধবী বিদ্যাময়ী স্কুলের সেই লাল দালানে হেলান দিয়ে মনের সুখে সুখ-দুঃখের গল্প করছে।

জামিলা খাতুন জানালেন, ১৯৫৮ সালে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তেন তারা। প্রতিদিন নিয়ম করে স্কুল, পড়াশোনা, দুষ্টুমি আর আড্ডাবাজি করতে করতে এক সময় স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে চার বান্ধবী উজ্বলা, রাবেয়া, সায়েদা আর তার গন্তব্য হয় টাঙ্গাইলের কুমোদিনী কলেজে। পরে সেখান থেকে আরও কয়েকটি বছর কাটে রাজবাড়ী ল’ কলেজে।

এরপর জীবনের তাগিদে ঠাঁই হলো একেকজনের একেক জায়গায়। কেউ ঢাকায়, কেউ কলকাতায় আবার কেউবা সুদূর বিলেতে। একটা সময় জীবনের ব্যস্ততায় একেবারেই হারিয়ে গেলেন কেউ কেউ। এভাবেই কেটে যায় ৫৭টি বছর। অবশেষে ফেসবুকের কল্যাণে আবারও কথা হল উজ্জ্বলা-জামিলার।

জামিলা খাতুন বলেন, এটি কখনো চিন্তাই করতে পারিনি যে ঘনিষ্ঠ স্কুল বান্ধবীর সঙ্গে আবারও পরিচয় হবে নতুন করে। কত আনন্দে সময় কেটেছে আমাদের। ছোটবেলার সেই স্মৃতি আবারও নতুন করে পাওয়া এটা আমার কাছে খুবই সাংঘাতিক ব্যাপার।

উজ্জলা দাসগুপ্ত বলেন, ছোটবেলার বন্ধুত্ব আলাদা জিনিস। এত বছর পর সেই বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া যেন আকাশের চাঁদ পাওয়া। কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে ছোটবেলার বন্ধুকে আবার খুঁজে পাবো। এটার অনুভূতি বোঝানো সত্যি খুবই কঠিন।

দিন যায়, মাস যায়। কালো চুল সাদা হয়। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে পার হয়ে যায় যুগ যুগ। কিন্তু বদলায় না বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব কখনো মলিন হয় না, থাকে চিরসবুজ।

ময়মনসিংহ।