ছবি: প্রতীকী

পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যারা অপরের কল্যাণে নিজের সর্বস্ব দিতে পিছপা হন না। তেমনই এক বিরল মানুষ আমার বাবা। শুধু আমার বাবা নয়। আমাদের প্রত্যকের জীবনে বটবৃক্ষের ছায়া বাবা নামের মানুষটি। বাবাকে ঘিরে আমাদের প্রত্যকেরই রয়েছে হাজারো স্মৃতি; হাজারটা না বলা কথা। আমি পরিবারের বড় সন্তান। আমি আমার ছোট থেকে এখনো পর্যন্ত বাবাকে ভীষণ ভয় পাই। আমার বাবা সহজাতভাবেই অনেক রাগী। ছোট থেকেই বাবা আমাকে অনেক শাসনে মানুষ করেছেন। ছোট ছোট ভুলের কারণে অনেক বকা দিয়েছেন। কখনো বা মারও দিয়েছেন। কিন্তু পরক্ষণেই দেখেছি তিনিও কেঁদেছেন নিভৃতে-অন্তরালে!

ছোট বেলায় বাবার মার খেলে মাঝে মাঝে মনে হতো এ মানুষটা ভালোবাসতেই জানেনা। অথচ আমাকে বকা দেওয়ার পর তার ভেতরে গুমরে মরার যন্ত্রণার হিসাব কখনোই বুঝতে চাইনি; পারিনি। বাবার এই রাগের মাঝে তখন দেখতে পাইনি তার মাঝেও মমতায় ঘেরা এক আত্মার অবাধ বসবাস। আসলে বাবারা চান আমরা সেরা মানুষ হই। ছোট থেকেই যেন আমরা ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারি। 

আমি দেখেছি আমার বাবা ভালো একটা খাবার নিজে না খেয়ে আমাকে দিয়েছেন। নিজের শখ পুরন না করে আমার আবদার পূরণ করেছেন। আমি কোনো আবদার করেছি আর বাবা সেই আবদার পূরণ করেননি এমন কখনো হয়নি। বাবা আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। ছোট থেকেই আমাদের ভাই বোনের মধ্যে বাবার ভালোবাসা আমি সবচেয়ে বেশি পেয়েছি। আমার সামান্য জ্বর হলেও এই মানুষটাকে দেখেছি নিদ্রাহীন-নিথর-প্রার্থনারত। আমি সুস্থ না হলে তিনি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করতেন না। আমার শ্বাস-প্রশ্বাসেই যেন তার বেঁচে ফেরা। আমার সুস্থতাই যেন তার ক্লান্ত চোখের শীতলতা। আসলে বাবাদের ভালোবাসাটা আমরা অনেকেই বুঝিনা। তাদের দর্শনটা গভীর অথচ নীরব ত্যাগের। বাবারা আমাদের আগলে রাখতে কতো ত্যাগ, কত পরিশ্রম করেন তার কিছুই আমরা জানতে পারি না। জানার চেষ্টাও করি না।  

আমার বাবা আমাকে অনেক ভরসা করেন। আমাকে ঘিরে বাবার হাজারো স্বপ্ন। আমি যাতে মানুষের মতো মানুষ হতে পারি। নৈতিক ও আদর্শবান মানুষ হয়ে উঠতে পারি। তাদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি। জীবনে যাতে স্বাবলম্বী হতে পারি এর জন্য বাবা ছোট থেকেই বোঝাতেন। কখনো কখনো শাষণ করতেন। সামর্থ্যর নিক্তির শেষ পাল্লা দিয়েও এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমাকে সঠিক লক্ষ্যে পৌছে দেওয়ার জন্য। জানিনা তার এই ভরসা আর বিশ্বাসের দাম কতটা দিতে পারবো। বাবা আমাকে দিয়েছেন অনেক। বিনিময়ে কষ্ট ছাড়া সম্ভবত কিছুই দিতে পারিনি। থাকুক না কিছু ঋণ! আজন্ম এই ঋণের বোঝা থাকুক ছায়া হয়ে- মায়া হয়ে।

আমার কাছে মনে হয় একটি মেয়েকে তার বাবার থেকে বেশি কেউ  ভালোবাসতে পারেনা। বাবা এক মায়ার নাম। এক ছায়ার নাম। বাবারা তাদের সারাটা জীবন শুধু তার সন্তান আর পরিবারকে ভালো রাখার জন্য অকাতরে দিয়ে যান। দিনশেষে নিজের জন্য কিছুই করেন না। বাবাদের কাছে তার সন্তানের সফলতা, সন্তানের ভালো থাকাই যেন সবকিছু। বাবা জীবনের বটবৃক্ষ, নিদাঘ সূর্যের তলে সন্তানের অমল-শীতল ছায়া। বাবা মানে নির্ভরতার আকাশ, নিরাপত্তার চাদর। সন্তানের নিত্য আবদার মেটানো এবং তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের  জন্য নিজের বর্তমানকে প্রতিনিয়ত হাসি মুখে বিসর্জন দিচ্ছেন এই বাবা। হাজারো কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করে তিল তিল করে বড় করে তুলছেন বাবা তার সন্তানদের। আমাদের সুখ, শান্তি আর আবদার মেটানোর জন্য বাবাদের অসীম ত্যাগ তিতিক্ষা কখনোই বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। কখনোই বলা হয়নি বাবা আপনাকে কতোটা ভালোবাসি। আমার সেরা শিক্ষক আপনি। আমার কাছে আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা মানুষ। পৃথিবীর শেষ প্রান্তে থেকেও আপনি আমার প্রতিটি মুহূর্তের অনুপ্রেরণা। আমার এগিয়ে চলার শক্তি।  

বাবা দিবস উপলক্ষে রব্বে কারিমের দরবারে একটাই চাওয়া-আমি যেন আমার শেষ দিন পর্যন্ত বাবার অবাধ্য না হই। আমাকে ঘিরে বাবার সমস্ত স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি। ছেলেবেলা থেকেই আজ অবধি কখনোই বাবাকে ভালোবাসি বলা হয়নি। আজও বলতে চাই না। আমাদের চারপাশে তো কতকিছুই হয়। কত হৃদয় নিভৃতে কাঁদে। কত শুভকামনা আর ভালোবাসা গোপন রয়। তার সবকিছু কি আমরা জানি? তুমিও না হয় জানলে না বাবা, আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি!

লেখক- শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।