ছবি: প্রতীকী

কেউ বলে বাবা বটবৃক্ষ, কেউ বলে ঝুম বৃষ্টিতে ছাতা। যে যাই বলুক; দু-চার লাইনে বাবাকে বর্ণনা করা বেশ কষ্টকর। ফল গাছ যেমন ফল নিয়ে মাথা নিচু করে মানুষের উপকার করার আনন্দে মাথা উচু করে বাঁচে, বাবাও তেমন একজন।

হোক চাকরিজীবি, শিক্ষক, ডাক্তার কিংবা দিনমজুর, দিনশেষে ঘর্মাক্ত শরীরে বাড়ি ফিরে কান্তিমাখা হাসিতে কষ্ট লুকানো মানুষটা বাবা। বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়া বাবা যে নিশ্চিন্ত থাকার কারণে নয় বরং টিকে থাকার লড়াইয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে যায় তা বুঝতে বুঝতে আমরা বড় হই। আমাদের আবদার আছে, অভিযোগ আছে, দুঃখ আছে, কষ্ট পেলে হাউমাউ করে কাঁদতে পারি। বাবা সেটাও পারেন না।

বাবা হচ্ছেন, সেই মানুষটা যিনি শূন্য পকেটেও ছুটে যান সন্তানের আবদার মেটাতে। হন্যে হয়ে ছুটে চলেন জীবিকার সন্ধানে। বাবার শাসনে সূর্যের প্রখরতা থাকলেও বাবা হচ্ছেন সূর্য। তিনি না থাকলে অন্ধকারে ছেয়ে যাই আমরা।

ঈদ-আনন্দ উৎসবে আমাদের চিন্তা থাকে কি জামা কিনবো, কোথায় ঘুরতে যাবো। আর বাবাদের চিন্তা থাকে আমাদের উৎসব কিভাবে আরো আনন্দময় হবে, কিভাবে কি করলে আমরা খুশি হবো। বাবা সব সমস্যার সমাধান। মেঘে ঢাকা সূর্যের ফাঁকে এক চিলতে রোদের হাসি।

মানুষ হিসেবে খারাপ এমন অনেকে আছেন, কিন্তু বাবা হিসেবে খারাপ সেই সংখ্যা খুবই নগন্য। বাবা গম্ভীর, বাবার শাসন ছোটবেলায় তেতো বলে মনে হলেও বড় হয়ে আমরা বাবার শাসনের কারণ বুঝি।

জীবিকার তাগিদে চাকরিজীবী বাবারা বের হন সেই সকালে বাচ্চারা ঘুমিয়ে থাকতে, রাতে হয়ত ফিরেন তখনও বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ে। একজন প্রবাসী বাবা প্রবাসে মানবেতর জীবন যাপন করেন পরিবারের কথা চিন্তা করেই। উপার্জনের তাগিদে পরিবারের বাইরে বেশি সময় ব্যয় করার কারণে হয়ত সন্তানদের সাথে বাবাদের সখ্যতা গড়ে উঠে না। তাই বলে বাবাদের ভালোবাসা কমে যায় না।

বাবা কখনো মুখে বলেন না ভালোবাসি, তবে কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণ করে দেন। মসজিদ-মাদ্রাসা, মিলাদ-মাহফিল থেকে পাওয়া এক প্যাকেট বিরিয়ানী কিংবা মিষ্টিও বাবারা নিজে না খেয়ে সন্তানের জন্য নিয়ে যান পরম স্নেহে। একজন দিন-মজুর বা মধ্যবিত্ত বাবা ও সন্তানের আবেগ ও ভালোবাসা এভাবেই প্রকাশ হয়। বাবা কতশত চিন্তা-হতাশা-গ্লানি বুকে পাথর চাপা দিয়ে আকাশসম দায়িত্ব পালন করে চলছেন নিরবে।

আমাদের বাবারা ম্যাজিশিয়ান। তারা আমাদের শখ পূরণ করতে জানেন। ম্যাজিশিয়ান এর মত সব আবদার রাখেন আমাদের। কিন্তু বাবাদের তো আলাদিনের চেরাগ নেই যে দ্বৈত্য এসে দিয়ে যাবে সব; তাই বাবারা হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে আমাদের জন্য ম্যাজিশিয়ান হন ।

আমাদের পরম ভালোবাসার এই ম্যাজিশিয়ান বাবারা জীবনের শেষ বসন্তে এসে সন্তানদের কাছে বোঝা না হোক। অবহেলিত, লাঞ্ছিত হয়ে বৃদ্ধাশ্রমে না যেতে হোক। মৃত্যুর সময় কেউ পাশে থাকবে না, লাশ একা ঘরে পচে গলে দুর্গন্ধ ছড়াবে এই ভয়ে কোনো বাবাকে ফেইসবুক লাইভে এসে আত্নহত্যা করতে না হোক। কবি বলেছেন,‘আমাদের সামর্থের সময় হতে হতে বাবা- মায়েদের সাধগু‌লি ফুরিয়ে যায়’। কবির কথা সত্যি না হোক!

আল্লাহ সন্তানদের বাবা-মায়ের সাধ পূরণ করার তৌফিক দিক। হাসি আনন্দে একসাথে জীবন পাড় করার তৌফিক দিক। বাবা-মার জন্য সন্তানের হৃদয় কোমল ও সহনশীল হোক। মহান আল্লাহর কাছে আমাদের চাওয়া হোক,‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানী সাগীরা’। ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতামাতার প্রতি দয়া করো। যেমন তারা দয়া মায়া, মমতা সহকারে আমাকে শৈশবে প্রতিপালন করেছিলেন। -(সূরা বণী ইসরাইল,আয়াত ২৪)

শিক্ষার্থী, অনার্স ১ম বর্ষ, ইংরেজি বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।