ছবি: প্রতীকী

ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর যশপুর গ্রামে বাবার জন্ম। দু’ভাই, এক বোনের মধ্যে বাবা ছিলেন দ্বিতীয়। দাদা কৃষক ছিলেন। বাবার শৈশবেই দাদার মৃত্যু হয়। জীবন আর সমাজের বাস্তবতায় নতুন সংসারে পাড়ি জমান দাদি। যাওয়ার সময় সদ্য জন্ম নেওয়া নিজের ছোট মেয়েকে রেখে যান ছেলেদের কাছে। ছোট বোনকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন আমার বাবা ও বড় চাচা। 

দাদির সামনে নতুন এক সুখের দিগন্ত। এদিকে ছোট বোনকে নিয়ে বাবা, চাচার অনিশ্চির ভবিষ্যত, নতুন করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।বাবা, চাচা আর ফুপির অসহায়ত্ব দেখে তাদের আগলে নিলেন বাবার দূর সম্পর্কের এক দাদা।

বাবার দাদা ধর্মপ্রাণ আলেম ছিলেন। তাই পড়াশুনা, জ্ঞান অর্জন ও উন্নত জীবন গঠনের প্রতি তার ধারণা ছিল ইতিবাচক। বড় চাচাকে পড়াশোনায় আগ্রহী করতে না পারলেও বাবাকে এক পর্যায়ে ভর্তি করিয়ে দেন এতিমখানায়। এতিমখানায় পড়াশোনার মাঝে মাঝে দাদার বাড়িতে বেড়াতে আসতেন বাবা। এসময় তাকে মাঠের কৃষি কাজ করতো হতো। 

অর্থনৈতিক কারণে বইপত্র, পড়াশুনার প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পেতেন না বাবা। এতো সীমাবদ্ধতার পরেও বাবা পড়াশোনা থেকে বিরত থাকেননি। অনেক সময় এতিমখানার অযত্ন অবহেলায় বাবা কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত হতেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎস, ওষুধপত্র না পেলেও প্রাকৃতিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠতেন। তবে বাবা কোনো অবস্থাতেই ধৈর্য হারাতেন না। অনাহারেও বাবা পরিতৃপ্তি, সন্তুষ্ট থাকতেন।

অর্থাভাবে কাগজ-কলম কিনতে না পারলেও বাবা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের ফেলে দেয়া খাতার অংশগুলোতে লেখার কাজ সারতেন। বই, কলমের মতো শিক্ষার অপরিহার্য উপকরণও বাবা কুড়িয়ে যোগাড় করতেন। সর্বোপরি ত্যাগের পারাকাষ্ঠায় ধৈর্যের সঙ্গী হয়ে তিনি শিক্ষাঙ্গণে অটল ছিলেন। এতিমখানায় অধ্যয়নের চাপের পাশাপাশি বাড়িতে এসে আবার কৃষি জমিতে কাজ করার দায়বদ্ধতা ছিল তার।

লেখক : সংবাদকর্মী