ছবি: প্রতীকী

শৈশবের দিনগুলো পার হয়ে যতই বড় হয়েছি, বাবাকে অনন্যসাধারণ হিসেবে পেয়েছি। আমার লেখাপড়াকে প্রাধান্য দিয়ে, তিনি তার কর্মজীবন পরিচালনা করেছেন। আমার মানসিক বিকাশ, ভবিষ্যৎ, নিরাপত্তা- এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে সবসময় তার জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এর জন্য তার জীবনের কতশত সুখ-শান্তি, চাওয়া-পাওয়া, ত্যাগ করতে হয়েছে, সে কথা না হয় বাদই দিলাম। 

সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একজন বাবা যে নিজের কত ইচ্ছা জলাঞ্জলি দেন তা কিছুটা অনুভব করছি, নিজেকে একজন চাকরিজীবী হিসেবে পেয়ে। 

আমার পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে বাবা নিজের কাজের গণ্ডি ছোট করে নিয়ে আসতেন। নিজের দায়িত্ব মিটিয়ে, বাকি সময়টা ব্যয় করতেন আমার লেখাপড়ার পিছনে। মুখস্ত বিদ্যার বিরুদ্ধে একা লড়েছেন আমাকে নিয়ে। এক দিনের জন্যও হাত ছেড়ে দেননি। প্রয়োজনে ছুটি নিয়ে হলেও, আমার অধ্যায়নকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়াই ছিল, পরিবারের নীতি। 

মায়ের মুখে শুনেছি, ছোট বেলায় আমার সামান্য অসুস্থতার সময়টা বাবার খুব অস্বস্তিতে কাটতো! কত রাত জেগে জেগে কাটিয়েছেন, তার সাক্ষী একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। রাত-বিরাতে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মঈন উদ্দিন আংকেলের কোয়াটারে কতবার নিয়ে যেতেন, তা বাবা নিজেও জানতেন না। 

শিশুদের দেখাশোনা ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা ছিলেন সেরা। ছোট বেলার কম বেশি অনেক শখই পূরণ করেছেন। তাই বলে বাবার কাছে চাইলেই পাওয়া যায়, তেমনও ছিলেন না তিনি। একমাত্র সন্তান হওয়ায় ভালোবেসেছেন, সীমাহীন কিন্তু আবদারে ঢেঁকি গেলা শিখাননি আমাদের।

চিকিৎসক বাবাকে একেবারে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। তিনি চেম্বারের বাইরেও রোগীদের নিয়ে ভাবতেন। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, গরিব রোগীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। রোগীদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো তিনি খুব ভালো বুঝতে পারেন।

মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসেবেও বাবার বেশ যশখ্যাতি। বাস্তবিক উদাহরণ দিয়ে, প্রাণবন্তভাবে তিনি বোঝাতেন শিক্ষার্থীদের।

পিতার কথা লিখে শেষ করার নয়। এটা এমন এক অনুভূতি যা আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। সবশেষে বলবো, একাধারে পিতা হিসেবে তিনি আলোর দিশারি অন্যদিকে চিকিৎসক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত যশস্বী ও আদর্শবান। ব্যক্তিগত জীবনে নীতি পরায়ণ ও ধর্মপ্রিয় মানুষ। অবসর জীবনে, পরিবারের সাথে ও ইবাদত বন্দেগিতে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। পৃথিবীর সব বাবাই সুখী হোক।

পিএইচডি গবেষক