ছবি: প্রতীকী

আব্বার উচ্চারণে কখনো কোনো ত্রুটি আমার কানে না এলেও খেয়াল করেছি তিনি কক্সবাজারকে ‌‘কক্সোবাজার’ বলেন সবসময়ই। ২০২০ সালের আগ অব্দি আমার কক্সবাজার ট্যুর হয়েছে একাধিকবার। প্রতিবার আব্বা আপত্তি তুলে বলতেন- দূরের পথ, যাওনের দরকার কী! জোয়ারে ভেসে গেলে সর্বনাশ!

তখন বুঝতাম না এগুলো আব্বার অভিযোগও নয় অনুযোগও নয়। এগুলো আব্বার পিতৃত্ববোধ৷ তা না হলে তার সকল আপত্তিকে তোয়াক্কা না করে দূরের সাগরপাড়ে চলে যাবার পর তাঁর এত কল আসে কেন! 'পানিতে নামিস না! ঢেউ এলে তীরে চলে আসবি! টাকা বেশি থাকলে শুঁটকি কিনিস। ফোনের ওপারে আব্বার এসব ভীতুময় নমনীয়তা দেখে প্রত্যুত্তরে তাকে বলা হয় না- আপনি এত ব্যাকডেটেড কেন! 

আমি বাড়ি এসে আব্বাকে সাগরের গল্প শোনাই। মোবাইল খুলে ছবি দেখাই। আব্বা আক্ষেপে বলেন- জীবনভর রোজগার করে গেলাম, কখনো কক্সোবাজারে যাওয়া হয়নি। আব্বার কথার অগ্নিসংযোগ আমার ভেতরটা কাঠকয়লার মতো পোঁড়াতে থাকে। আমার কাল্পনিক চোখে ভেসে ওঠে এক সীমানা সমুদ্রের অবারিত বেলাভূমি। আমি স্পষ্ট দেখতে পাই আড়াই কিংবা তিন হাতের ভৌগোলিক দূরত্বে আমি আর আব্বা বিশাল এক সৈকতের মাঝখান দিয়ে হেঁটে হেঁটে নোনাজলদের অভ্যার্থনায় পা ভেজাতে তৈরী হতে থাকি। 

আব্বা হাঁটছেন, আমি হাঁটছি। কাল্পনিক এক সাগরপাড় যে সূর্যের তপ্ত প্রহরে উজ্জ্বল হয়ে ওঠছে। কিন্তু কল্পনার ওই আজগুবি দৃশ্যের নিখিল ছবিকে জলের ছিটায় ধুয়ে দিয়ে সত্যিকারের ‘কক্সোবাজারে’ আমরা বাপ ছেলে হাঁটবো কবে। কোথায় সেদিন!

আমিশাপাড়া, নোয়াখালী