ছবি: প্রতীকী

মাকে নিয়ে অসংখ্য গল্প-কবিতা ও উপন্যাস লেখা হয়ে গেছে, হচ্ছে।  আমরা পড়েছিও। কিন্তু বাবাকে নিয়েও যতটা হতে পারতো, তার কিছুই হয়নি। আজ আমি বাবাকে নিয়ে বলব। একজন সন্তানের জীবনে বাবা হলেন বটবৃক্ষ স্বরূপ। যে বৃক্ষের শীতল ছায়ায় সন্তান কোনো প্রকার বাধা বিপত্তি ছাড়াই পরম মমতার পরশে বেড়ে উঠতে থাকে। বাবার শক্ত হাত যেমন সন্তানের সব বাধা-বিপত্তি দূরে ঠেলে দেয় ঠিক তেমনই বাবা বুক দিয়ে সন্তানকে সারা জীবন আগলে রাখে। প্রতিটি সন্তানের জীবন গঠিত হয় বাবার শ্রমে আর ঘামে।শুধু তাই নয় সন্তানকে আগলে রাখতে গিয়ে বাবা শুধু নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দই নয়, কখনোবা বিলিয়ে দেন নিজের জীবন।

আমার বাবা একজন আর্দশ শিক্ষক। খুব ছোটবেলার কথা, বাবার হাত ধরেই প্রাইমারি স্কুলে এ যাওয়া। আমি সেই ভাগ্যবতী যে কি না বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে পেরেছি। কারো বাবাকে ছোট করতে চাই না, সবার বাবাই ভালো কিন্তু আমার বাবা একটু বেশি ভালো। একটা কথা মনে পড়লে আজও কান্না চলে আসে- ছোটবেলায় একবার আমার খুব জ্বর ও পায়ে ব্যথা হয়, তখন বয়স ৮ কি ৯। সারারাত ঘুমায়নি আমার বাবা ও মা, সারারাত আমার পাশে ছিল, একটু পর দেখি বাবা আর মা দুজনেই কান্না করছে। খুব কষ্ট লাগে আজও সেই স্মৃতি মনে পড়লে।

প্রথম যেদিন ইলিশ মাছ খাই খুব মজা পেয়েছিলাম। খুব বায়না ধরেছিলাম যে আবার খাবো। সাথে সাথেই আব্বু বাজারে চলে যায়। এমন বাবা কে না চায়? বাবার স্কুলে পড়েছি। প্রতিবার রেজাল্টের দিন বাবা রেজাল্ট নিয়ে বাসায় আসতো আর আমি ভয় পেতাম, রেজাল্ট শুনতে যেতে চাইতাম না কিন্তু বাবা কখনো বকেনি, রেজাল্ট খারাপ করলেও বরং উৎসাহ দিয়েছে সবসময়। 

মধ্যবত্তি পরিবার। এই পরিবারে সমস্যা বেশি থাকে কিন্তু কখনোই সেই সমস্যায় আমরা পড়িনি। যত ঝামেলা গেছে সব মা-বাবার ওপর দিয়ে। এসএসসির গণ্ডি পার হলে আমাকে পড়াশুনার জন্য হোস্টেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন বোঝা শুরু করলাম বাবা মা আমাদের জন্য যে কী! খুব কষ্ট পাই বাবা-মা থেকে দূরে থাকি বলে।

বকাঝকা খেয়েছি সব মায়ের কাছ থেকে বেশি, বাবার কাছ থেকে পাইনি। বাবা, তুমি আছো বলেই মন খারাপ স্থায়ী হতে পারেনা। আল্লাহ্ তোমাকে সুস্থ রাখুক, তোমার সব নেক ইচ্ছা আল্লাহ পূরণ করুক। আমাদের তিন ভাই-বোনের হায়াতের বিনিময়ে হলেও আল্লাহ্ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুন।

আজ  বাবাকে নিয়ে এসব লিখছি, বাবা বাবা জানে না, জানাতে চাইও না। কিন্ত বাবাকে অনেক ভালোবাসি এটা কীভাবে জানাবো? বাবার মুখটার দিকে তাকালে খুব মায়া লাগে। বাসা থেকে যখন হোস্টেলে আসি তখন খুব কষ্ট লাগে, আম্মু নিরবে কাঁদে কিন্তু বাবা একটু ও কাঁদে না। বোঝাতে চায় তার একটুও কষ্ট হয়না। আসলেই কি তাই? সব বুঝি বাবা, তোমার মেয়ের সাথে লুকোচুরি খেলে পারবে কি? তোমার রক্তই তো বয়ে বেড়াচ্ছি বাবা।

মাঝে মাঝে পাশে থেকে কাছে থেকে খুব কথা বলতে ইচ্ছা করে, যখন ফোন দেই ফোন করলে লাইন কেটে দেয়। একটু পর নিজেই ফোন করে আর লাইন কাটার কথা বললে বলে থাক না টাকা আছেতো, টাকা তো আমার ফোনেও আছে বাবা। আজ ২৪টা বছর পর এসে বলতে চাই, বাবা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।

আমি জানি, পৃথিবীর সব বাবাই তাঁর সন্তানকে জীবন দিয়ে ভালোবাসেন। আমার বাবা যে অবস্থান থেকে যে ত্যাগ দিয়ে আমাকে ভালোবাসা দিয়ে এসেছে, তার বাইরে তো আমার নিজের পৃথিবী নেই। বাবাকে ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট দিন লাগে না, কিন্তু এই কথাগুলো লেখার জন্য উপলক্ষ লাগে।